প্রতিটি স্কুলকে ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত করার আহ্বান বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের

অর্থনীতিতে প্রযুক্তির ব্যবহারে নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, দেশের প্রত্যেকটি স্কুলকে একটি ব্যাংকের সঙ্গে থাকতে হবে, যাতে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা জানতে পারে।
বৃহস্পতিবার ৪৭তম সার্কফাইন্যান্স গভর্নরস গ্রুপ মিটিং ও সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধনী পর্বে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন সার্কভুক্ত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি ও অর্থ সচিব।

গভর্নর বলেন, “অর্থনীতিতে প্রযুক্তির ব্যবহারে নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি দেশের আর্থিক শিক্ষা আলাদা।
বাংলাদেশের প্রত্যেকটি স্কুলকে একটি ব্যাংকের সঙ্গে থাকতে হবে। প্রত্যেকটি স্কুল শিক্ষার্থীকে একটি ব্যাংক হিসাব থাকতে হবে। ব্যাংকিং কার্যক্রমের সঙ্গে এবং কীভাবে একটি হিসাব চালাতে হয় সে সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।”

সর্বপ্রথম আর্থিক খাতে বৈষম্য দূর করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “এটা প্রধান চ্যালেঞ্জ। ধর্ম ও সামাজিক বাধা তাদের অতিক্রম করতে হবে।”

দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি উন্নয়নে জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গভর্নর বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার কোনো বিকল্প নেই।
আহসান মনসুর বলেন, “নীতিনির্ধারক, রাজনীতিবিদ, আমলাসহ সকলকে অর্থনীতির নীতি তৈরি করার ক্ষেত্রে কৌশল ও পদ্ধতিগত নানা দিক অনুসরণ করতে হবে।
অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে হলে সামষ্টিক অর্থনীতি খাতের স্থিতিশীলতার কোনো বিকল্প নেই। কারণ বিশ্বের যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্ব শর্তই হল- সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা। এটা আমাদের করতেই হবে, যদি যথাযথ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আমরা চাই।”

তাছাড়া আর্থিক উদ্দেশ্য সফল করার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তির সফল ব্যবহার করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গভর্নর বলেন, “সার্কভুক্ত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ব্যবধান নিয়ে কাজ করা। আর্থিক উদ্দেশ্য পূরণে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ডিজিটাল প্রযুক্তিকে এক সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে।”
ভুটানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিউআর কোড ব্যবহার করছে তুলে ধরে তিনি বলেন, ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও এটা তাদের অর্থনীতিতে উপকার আসছে। যা সামনে আরো বৃহৎ পরিসরে তাদের কাজে আসবে।
“আমরা কোন ফরম্যাটে কিউআর কোড ব্যবহার করছি, তা জানি না। তবে এটার সঠিক ব্যবহার নিয়ে আমাদের আবার চিন্তা করা উচিত। সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে বিভিন্ন রকম ধারণা, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানা যাবে।”

দক্ষিণ এশিয়ার একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ রয়েছে মন্তব্য করে আহসান মনসুর বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো মধ্যে প্রায় একটা বড় অংশ আর্থিক নেটওয়ার্কের মধ্যে নেই। আর্থিক খাতের দিকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রত্যেকটি দেশ ভালো করার চেষ্টা করছে। একদিকে বাংলাদেশ ভালো করছে, আরেক দিকে ভুটান, আবার অন্যদিকে ভারত ভালো করছে।
প্রত্যেকের কাছেই ভালো উদাহরণ পাওয়া যাচ্ছে। সেটা নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কোন জায়গায় আমাদের উন্নতি করতে হবে, সেটা বুঝতে হবে।”

সার্কভুক্ত দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এগোতে পারলে আরও বেশি মানুষ আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আসবে বলে মন্তব্য করেছেন গভর্নর।
তিনি বলেন, এখনো বহু মানুষ আর্থিক নেটওয়ার্কের বাইরে আছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ব্যবস্থা গড়ে তোলাকে এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেও দেখছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।
তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিভিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তবে নিজেদের মধ্যে জানা তথ্য ও জ্ঞানগুলো কাজে লাগাতে হবে। যার মাধ্যমে প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি উন্নতি হবে।
“ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে জানার মাধ্যমে আমরা আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক সমাজ গড়ে তুলতে সক্ষম হওয়া যাবে।”