অধ্যক্ষকে হেনস্তার প্রতিবাদে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখে আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও ইন্টার্নি চিকিৎসকরা

অধ্যক্ষকে পদত্যাগে ‘বাধ্য করানোর চেষ্টা’ এবং ‘হেনস্তা’ করার ঘটনার প্রতিবাদে জরুরি ছাড়া সব চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখে আন্দোলনে নেমেছেন ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর শ্যামলীর এ হাসপাতালে গত কয়েকদিন ধরে চলা ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে বুধবার সকাল থেকে সেবা বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন তারা।

অধ্যক্ষ আবুল বাশার মো. আব্দুল মতিনকে পদত্যাগে চাপ দেওয়া এবং লাঞ্ছিত করার অভিযোগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুই কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিলেও আন্দোলনকারীদের দাবি, এ ঘটনায় জড়িত আরও তিনজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বুধবার সকাল থেকে এ দাবিতে ইন্টার্নি ও শিক্ষার্থীরা জরুরি ছাড়া অন্য সব চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখেছেন। তারা হাসপাতালের প্রবেশ মুখ বন্ধ রেখে কাউকে ঢুকতে দেননি এবং প্রথমে ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলতে চাননি। তারা বলেন, ‘উপর’ থেকে বলা হলেই শুধু সাংবাদিকরা ঢুকতে পারবেন।

বিক্ষোভরতদের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী জানান, হাসপাতালের পরিচালক সুলতান মাহমুদ, চিফ অপারেটিং অফিসার নাসির উদ্দিন, অপারেশনস ম্যানেজার সাইফুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে তারা আন্দোলন করছেন। তাদের অপসারণ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

হাসপাতালের গেটের বাইরে প্রায় আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ‘উপর’ থেকে ডাক পড়লে সাংবাদিকদের সাত তলার মিলনায়তনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির শিক্ষক, ইন্টার্নি ও শিক্ষার্থীদের জটলা দেখা যায়। এর মধ্যে তানজিন রহমান নামের একজন ইন্টার্নি মাইক নিয়ে কথা বলতে শুরু করে আজানের কারণে থেমে যান।

পরে তার কথা বলা শুরুর মুহূর্তে হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এম এ হাই চৌধুরী এবং কলেজের শিক্ষক অধ্যাপক এসএম ইদ্রিস আলীসহ কয়েকজন মিলনায়তনে ঢোকেন। তারা ইন্টার্নি তানজিনকে কথা বলতে নিষেধ করেন।

পরে অধ্যাপক ইদ্রিস মাইক নিয়ে বলেন, “গতকাল (মঙ্গলবার) একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। একটা ঘটনার পেছনে অনেক ঘটনা থাকে। এই ঘটনা নিয়ে আমরাও চাই না যারা রোগী নিয়ে কাজ করি, মানুষের সেবা নিয়ে কাজ করি তারা আন্দোলন করুক। কিন্তু আমরা সম্মান চাই।”

কী ঘটনা ঘটেছে বা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মিস্টার নাসিরই (চিফ অপারেটিং অফিসার) হচ্ছে মূল ক্রিমিনাল। এই পরিস্থিতির কারণে নাসির পালিয়ে গেছে। তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।” সুলতান মাহমুদের (হাসপাতালের পরিচালক) নাম তুলে ধরে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। এসব পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে চলে গেছেন।

অধ্যক্ষকে পদত্যাগে চাপ দেওয়া ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগে যে পাঁচজনের পদত্যাগ চেয়ে ইন্টার্নি ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন, তাদের মধ্যে এ দুইজন রয়েছেন। তাদের বিষয়ে জানানোর পর মিলনায়তনে থাকা সবাই হাততালি দিয়ে সমর্থন জানান।

এসময় অধ্যাপক ইদ্রিস বলেন, একটি সমাধান হয়েছে। এখন থেকে চিকিৎসকরা রোগীর সেবায় এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যাবেন। তবে বিকালেও আন্দোলনকারীরা কাজে যোগ দেননি।

অধ্যক্ষকে পদত্যাগ করানোর চাপ এবং লাঞ্ছিত করার বিষয়ে হাসপাতালের আরেক শিক্ষক নাজনীন নাহার বলেন, সাত থেকে ১০ দিন আগে কলেজ অধ্যক্ষ আবুল বাশার মো. আব্দুল মতিনকে পদত্যাগ করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করেননি।

তাজুল নামের একজন কিছুদিন আগে যোগদান করে প্রতিটি বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেন। প্রিন্সিপাল স্যারের কাছ থেকে কোনো পদত্যাগপত্র না নিয়েই তিনি আরেকজনকে প্রিন্সিপাল করার অপচেষ্টা চালান। পরে এসব বিষয় জানাজানি হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এরপরই কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে কথা বলে সপ্তাহ খানেক সময় চেয়ে নেয়।

“এই আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ছাত্ররা ক্লাসে যায় এবং সমাধান হয়। এরপরেই গতকাল (মঙ্গলবার) স্যারকে (অধ্যক্ষ) মিথ্যা কথা বলে একটি বিশেষ ভবনে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে মানহানি করা হয়েছে, ৫/৭ জন মিলে অ্যাটাক করলে তিনি দোতলা থেকে গড়িয়ে নিচে পড়ে যান।”

বিকালে শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মুয়াজ রহমান বলেন, তারা পাঁচজনের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ আনেন। কর্তৃপক্ষ দুইজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও বাকিদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। “আমরা চেয়ারম্যান স্যারকে বলেছি, তিনি এই তিনজনের ব্যাপারে সময় চেয়েছেন। কিন্তু আমরা সময় দিতে নারাজ। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।”

আন্দোলনকারীরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, সেই পাঁচজনের মধ্যে হাসপাতালের পরিচালক সুলতান মাহমুদ, চিফ অপারেটিং অফিসার নাসির উদ্দিন, অপারেশনস ম্যানেজার সাইফুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *