প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমালোচনার ক্ষেত্রে শিষ্টাচার লঙ্ঘন না করার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাইর পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পতিত স্বৈরাচার দেশকে অস্থিতিশীল করে সুযোগ নেওয়ার পাঁয়তারা করছে।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি এই আহ্বান জানান। কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন বিক্ষোভ সমাবেশে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে উত্তেজনাকর ও আক্রমণাত্মক স্লোগান নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চরমোনাইর পীর বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বাভাবিক। কখনো কখনো সমালোচনা তীব্র হতে পারে, কিন্তু কোনো অবস্থাতেই সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ১৫ বছরের পতিত ফ্যাসিবাদের বিষাক্ত ছোঁয়া এখনো দেশকে অনিরাপদ করে রেখেছে। পতিত স্বৈরাচার অস্থিতিশীল করে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে এবং শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে।”
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পরে দেশ গঠনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন বলে একটি ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রের কাঠামো ও আইনে কিছু অগ্রগতি হলেও রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও চরিত্রে তেমন পরিবর্তন আসেনি।
সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম আরও বলেন, ৫ আগস্টের পরে রাজনৈতিক হানাহানিতে নিহত-আহত মানুষের সংখ্যা শুনে আঁতকে উঠতে হয়। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, এমনকি রাজনৈতিক পরিচয়ে ধর্ষণ পর্যন্ত বেড়েছে। মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংস হত্যাকাণ্ডে স্বাভাবিকভাবেই জনতা ফুঁসে উঠেছে। সেই প্রতিবাদকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে হত্যাকাণ্ডকে আড়াল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের পরে মানুষ আর এমন রাজনীতি দেখতে চায় না। এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বড় একটি অংশ বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিএনপি কর্তৃক তাদের বহিষ্কারও প্রমাণ করে বিষয়টি। বিএনপির নেতাদের বলব, কর্মীদের অপরাধের দায়ভার আপনাদেরই নিতে হবে। দলের ভেতরে অপরাধীদের চিহ্নিত করে আগেই ব্যবস্থা নিন। প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা করে জনতার কাছ থেকে মার্জিত ক্ষোভ আশা করা যায় না।”
চরমোনাইর পীর বলেন, ১৪ জুলাই দেশের রাজনীতির জন্য সবচেয়ে কলঙ্কময় দিন। ইসলামী আন্দোলন বরাবর অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর কিন্তু মার্জিত সমালোচনা করে এসেছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের সিনিয়র নায়েবে আমিরের একটি পরামর্শমূলক বক্তব্য খণ্ডিতভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই খণ্ডিত বক্তব্যকে কেন্দ্র করে চরমোনাইয়ের মতো আধ্যাত্মিক ধারার বিরুদ্ধে নোংরা স্লোগান দেওয়া হয়েছে। বিএনপির মঞ্চ থেকে চরমোনাইকে শায়েস্তা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জামায়াত ও এনসিপিকে কেন্দ্র করে পতিত ফ্যাসিবাদের ভাষায় স্লোগান দেওয়া হয়েছে। এটি বিএনপির মতো দলের জন্য শোভন নয়।”
তিনি গত ১০ মাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ভয়াবহ আখ্যা দিয়ে বলেন, সরকার কেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ, তা ব্যাখ্যা করতে হবে। কোনো অদৃশ্য শক্তি সমস্যা তৈরি করলে তাকে মোকাবিলা করতে হবে। সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকা অবস্থায়ও এই পরিস্থিতি গ্রহণযোগ্য নয়।