গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় চারদিনের মাথায় চারটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান রোববার দুপুরে জানান, প্রথম দিন অর্থাৎ বুধবার নিহত চারজনের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে চারটি হত্যা মামলা করেছে। শনিবার রাতে করা প্রতিটি মামলায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অজ্ঞাত এক হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে চার মামলায় আসামির সংখ্যা ছয় হাজার।
এ ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে, তার মৃত্যুর ঘটনায়ও মামলা হবে বলে জানিয়েছেন ওসি।
গোপালগঞ্জে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ ও সমাবেশকে ঘিরে মঙ্গলবার থেকেই উত্তেজনা চলছিল। বুধবার সমাবেশে দফায় দফায় হামলার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে পুরো শহরে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষে চারজন নিহত হন এবং অন্তত নয়জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত হন।
প্রথম দিন নিহত চারজন হলেন শহরের উদয়ন রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (৩০), কোটালিপাড়ার হরিণাহাটি গ্রামের কামরুল কাজীর ছেলে রমজান কাজী (১৭), শহরের শানাপাড়ার সোহেল রানা (৩৫) এবং সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন।
ওই রাতেই সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাদের দাফন ও সৎকার করা হয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, প্রয়োজন হলে কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হতে পারে। তবে দীপ্ত সাহাকে দাহ করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে কী হবে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
গুরুতর আহত অবস্থায় বুধবার রাতেই তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে মারা যান অটোরিকশাচালক রমজান মুন্সী। তার মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। এর আগে শাহবাগ থানার একজন এসআই তার মরদেহের সুরতহাল করেন।
গোপালগঞ্জের সহিংসতায় সুমন বিশ্বাস (৩০) ও আব্বাস আলী (৩০) নামে আরও দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছেন।
পুলিশ জানায়, কিশোর রমজান কাজীর মৃত্যুর ঘটনায় মামলার বাদী হয়েছেন সদর থানার এসআই আইয়ুব হোসেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এনসিপি নেতাকর্মীরা বুধবার দুপুরে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে পৌর পার্ক থেকে মাদারীপুরের উদ্দেশে গাড়িবহর নিয়ে রওনা দেন। তারা শহরের এস কে সালেহিয়া মাদ্রাসার কাছে পৌঁছালে এক হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাসহ দুষ্কৃতকারীরা দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গাড়িবহরে হামলা চালায়।
পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাদের বাধা দিলে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর গুলি চালায়। এ সময় রমজান কাজী (১৭) গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বাকি তিনটি হত্যা মামলার এজাহারের বিবরণ ও আসামির সংখ্যা একই।
দীপ্ত সাহা হত্যায় বাদী হয়েছেন এসআই শামীম হোসেন। এজাহারে বলা হয়েছে, কলেজ মসজিদের পাশে মিলন ফার্মেসির সামনে দীপ্ত সাহা আহত হন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান।
সোহেল রানা মোল্লা হত্যায় বাদী হয়েছেন এসআই আবুল কালাম আজাদ। এজাহারে বলা হয়েছে, লঞ্চঘাট এলাকায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান।
ইমন তালুকদারের হত্যায় বাদী হয়েছেন এসআই শেখ মিজানুর রহমান। মামলায় বলা হয়েছে, লঞ্চঘাট এলাকার পুরাতন সোনালী ব্যাংকের সামনে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।