ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ, বিক্ষোভ ও সহিংসতার পেছনে প্রশাসনিক জটিলতা ও আইন-শৃঙ্খলার সমস্যাই দায়ী বলে মনে করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে দলীয় অবস্থান জানানো হয়েছে। ফখরুল বলেন, “রাজনৈতিক সরকার না থাকলে এই সমস্যাগুলো আরও বেড়ে যায়, সেটাই আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি।”
বুধবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাকে বিএনপি নিছক দুর্ঘটনা হিসেবেই দেখছে বলে জানান মহাসচিব। তবে সচিবালয়ের বিশৃঙ্খলার পেছনে রাজনৈতিক সমস্যা এবং নির্বাচন বানচালের চেষ্টা আছে বলে তিনি দাবি করেন।
তার ভাষায়, “ক্ষমতায় থাকা অন্তর্বর্তী সরকারে অনভিজ্ঞ লোক বেশি, অনেকের মধ্যে আবার ইগো কাজ করে। তারপরও আমরা সরকারকে আগের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।”
মঙ্গলবারের দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশের মধ্যে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন, দুই উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। একই দিনে এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে শত শত শিক্ষার্থী সচিবালয়ে ঢুকে ভাঙচুর চালায় এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।
ওই পরিস্থিতিতে রাতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা জানালেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের তাগিদ দেয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, “ক্রাইসিস তৈরি হলে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের ডাকেন, আমি যাই। তবে ঘন ঘন মতবিনিময় হলে হয়তো সমস্যা হতো না।”
তিনি আরও বলেন, “গতকাল মাইলস্টোনে দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব অবরুদ্ধ ছিলেন, সচিবালয়ে পরীক্ষা নিয়ে জটিলতায় ছাত্ররা ভেতরে ঢুকে পড়ে। বিষয়টি প্রশাসনিক জটিলতা ও আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা তৈরি করেছে।”
গোপালগঞ্জের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “জুলাই-অগাস্টে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাজিত করা হলেও এখন আবার ওই শক্তির উত্থান দেখা যাচ্ছে। এজন্যই প্রধান উপদেষ্টা সম্ভবত আমাদের মতবিনিময়ের জন্য ডেকেছিলেন।”
তিনি ঐক্য প্রসঙ্গে বলেন, “ঐক্য অটুট আছে। রাজনীতিতে কথার ছড়াছড়ি, বকাবকি থাকবেই। গণতন্ত্র মানে সকলকে কথা বলতে দেওয়া ও শোনা।”
ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতির কথাও তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “নির্বাচন প্রক্রিয়া দ্রুত করার এবং অস্পষ্টতা দূর করার তাগিদ দিয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন।”
বিমান দুর্ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা এটাকে দুর্ঘটনা ছাড়া আর কিছু দেখি না। উড়োজাহাজটি প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল, পাইলট সম্ভবত নিরাপদ জায়গায় নামানোর চেষ্টা করেছিলেন।”
সরকারের পদক্ষেপে অভিজ্ঞতার অভাব আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অনভিজ্ঞ লোক বেশি, অনেকের মধ্যে ইগো কাজ করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ কম হচ্ছে, যা হওয়া উচিত।”
সচিবালয়ে ও গোপালগঞ্জের অস্থিরতার পেছনে রাজনৈতিক চক্রান্ত আছে বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল। তার ভাষায়, “নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত আছে, কিন্তু জনগণ তা ব্যর্থ করবে।”
জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলের সঙ্গে বৈঠক নিয়েও কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। এই বৈঠকে দলটির সভাপতি মৃগেন হাগিদের নেতৃত্বে ২০ জন নেতা ও দলের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।