শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে সচিবালয়ে সহিংসতা: পুলিশের মামলা ১২০০ জনের বিরুদ্ধে

শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের পদত্যাগের দাবিতে সচিবালয়ে ভাঙচুর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সচিবালয় নিরাপত্তা বিভাগের এসআই গোলাম মুক্তি মাহমুদ মঙ্গলবার রাতে এই মামলা করেন। বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামান মামলাটি গ্রহণ করে আগামী ২৮ আগস্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ‘দাঙ্গা সৃষ্টি করে সচিবালয়ে প্রবেশ, ভাঙচুর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ’ করা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে বিভিন্ন কলেজের অজ্ঞাত শিক্ষার্থী ও ‘স্বার্থান্বেষী দুষ্কৃতকারীদের’।

শাহবাগ থানা আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই জিন্নাত আলী জানান, মঙ্গলবার ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা মাইলস্টোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জঙ্গি বিমান দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতসহ নানা দাবিতে ‘মার্চ টু শিক্ষা মন্ত্রণালয়’ কর্মসূচি পালন করেন।

প্রথমে তারা শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষাভবনের দিকে মিছিল নিয়ে গেলেও পরে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে সচিবালয়ের সব গেট বন্ধ করে দেওয়া হলেও শিক্ষার্থীরা পুলিশের অনুরোধ উপেক্ষা করে বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে বেরিকেড ভেঙে সচিবালয়ের মেইন গেইট পর্যন্ত পৌঁছায়। পরে তারা গেইট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পুলিশের ওপর লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল ছোড়ে, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হত্যার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। এতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এছাড়া সরকারি গাড়ি ভাঙচুর, ভয়ভীতি ও হুমকিরও অভিযোগ করা হয়েছে।

মঙ্গলবারের এ ঘটনায় সচিবালয়ের ভেতরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ লাঠিপেটা করে, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের সচিবালয়ের বাইরে বের করে দিলেও আশপাশের এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া চলে।

সংঘর্ষে আহত ৬৬ শিক্ষার্থী পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সোমবার জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের দাবি ওঠে। তবে মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতায় পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা আসে সোমবার রাত ৩টার দিকে, যা অনেক শিক্ষার্থীর কাছে সময়মতো পৌঁছায়নি। ফলে তারা কেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসেন।

শিক্ষা উপদেষ্টার বরাতে তথ্য উপদেষ্টা সোমবার গভীর রাতে ফেসবুকে পরীক্ষা স্থগিতের খবর দেন। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে দেরি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। পরে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার ও শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরের অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের ডাক দেন।

মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা প্রথমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করেন। সেখান থেকে বেলা দেড়টার দিকে সচিবালয়ের সামনে জড়ো হন। এই কর্মসূচিতে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, নূর মোহাম্মদ কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ, কমার্স কলেজ, আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ ও মিরপুর কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।