দুর্নীতির অভিযোগে ‘বৈষম্যবিরোধী ফ্ল্যাট প্রকল্প’ অনুমোদন স্থগিত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের জন্য রাজধানীতে ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদনের প্রস্তাব একনেক সভা থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে সরকার। ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

রোববার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম একনেক সভায় রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন মুহাম্মদ ইউনূস।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “এটা একটি ভালো উদ্যোগ হলেও টেন্ডারে যাওয়ার আগে খরচের সঠিক মূল্যায়ন দরকার। প্রস্তাবে ১৩৫৫ বর্গফুট আয়তনের ৮০৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণের কথা বলা হয়েছে, যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৬১ কোটি ১৬ লাখ টাকা।”

প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত। তবে পরিকল্পনা কমিশনের মূল্যায়নে দেখা যায়, ব্যয়ের ক্ষেত্রে অসঙ্গতি রয়েছে। একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকল্পে অতিরিক্ত খরচের অভিযোগও প্রকাশিত হয়।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রকল্পগুলো সমন্বিতভাবে পরিচালনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই পরিবারের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে ভিন্ন ভিন্ন সহায়তা দেওয়া হলে একটিকে অন্যটির সঙ্গে মেলানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সব কিছু একত্রে সমন্বয়ের আহ্বান জানানো হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আবাসনের বিষয়টি নিয়ে উত্তরাধিকার, অবস্থান—এমন অনেক প্রশ্ন আসে। কেন শুধু মিরপুরে, কেন সারা দেশে নয়—এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আরও পরিকল্পনা দরকার।”

এদিনের সভায় বাদ পড়া এই প্রকল্প ছাড়াও একনেকে মোট ৮ হাজার ১৪৯ কোটি টাকার ১২টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৮ হাজার ৫৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ১৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৫২ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

ঢাবির ‘অধিকতর উন্নয়ন’ প্রকল্প

সভায় অনুমোদিত বড় প্রকল্পগুলোর একটি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অধিকতর উন্নয়ন’ প্রকল্প, যার ব্যয় ২ হাজার ৮৪০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে ছয়টি একাডেমিক ভবন, ছাত্রীদের জন্য চারটি হল (২ হাজার ৬০০ আসন), ছাত্রদের জন্য পাঁচটি হল (৫ হাজার ১০০ আসন), শিক্ষক-অফিসারদের জন্য দুটি আবাসিক ভবনসহ স্টেডিয়াম, ডাকসু ভবনসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলো যেমন কার্জন হল, এসএম হল রক্ষা করেই পুরনো ভবন ভেঙে বা স্বল্পউচ্চ ভবনের স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হবে। কারণ ৩৫০ একর জায়গায় নতুনভাবে কিছু নির্মাণ সম্ভব নয়।”

একনেকে অনুমোদিত আরও প্রকল্প:

  • কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ (২য় সংশোধিত): ব্যয় বাড়িয়ে ২৭৭৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা
  • দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ২০টি ফায়ার স্টেশন স্থাপন: ৬৫০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা
  • কোস্ট গার্ডের জন্য লজিস্টিকস ও ফ্রিট মেইনটেন্যান্স ফ্যাসিলিটিস (২য় সংশোধিত): ব্যয় দাঁড়াল ৭৫৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা
  • গ্রামীণ স্যানিটেশন প্রকল্প ও কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন (৩য় সংশোধিত): ব্যয় কমে ১৩৪৩ কোটি ২১ লাখ টাকা
  • রেলওয়ের রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্বাসন (পূর্বাঞ্চল): ১৭৯১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা
  • মিরপুর সেনানিবাসে অফিসার্স মেস ও বিওকিউ নির্মাণ (১ম সংশোধিত): ব্যয় বেড়ে ২৩৪ কোটি ৬ লাখ টাকা
  • উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ (২য় পর্যায়): ৩৯৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা
  • বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন জাদুঘর সম্প্রসারণ (১ম সংশোধিত): ব্যয় বেড়ে ১৬০ কোটি ১৫ লাখ টাকা
  • কন্দাল ফসল গবেষণা জোরদারকরণ: ১০০ কোটি টাকা
  • স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রকল্প (বিপিডিবি, ১ম সংশোধিত): ব্যয় দাঁড়াল ৭৭০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা