ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সিধলা ইউনিয়নের বেড়াবিল এখন পানিতে নিমজ্জিত। টানা কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টিতে বিলে জমে থাকা পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত একর আমন ধানের জমি। পানিতে দীর্ঘদিন নিমজ্জিত থাকায় পঁচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে ধানের চারাগুলো। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
স্থানীয়রা জানান, বেড়াবিল থেকে সিধলং বিল পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সংযোগ খাল দখল ও দূষণে ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে কয়েক বছর ধরেই সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ফসলহানি হচ্ছে।
কুতুবপুর গ্রামের রাকিবুল হাসান বলেন, “খালে বাঁধ দিয়ে অনেকে মাছ ধরে; এতে পানি ঠিকভাবে প্রবাহিত হয় না। খালটি দ্রুত খনন করলে ফসল রক্ষার পাশাপাশি মাছ ও জীববৈচিত্র্যও বৃদ্ধি পাবে।”
হাসনপুর চৌরাস্তা গ্রামের সোহেল মিয়া জানান, “আমরা প্রায় দুই বিঘা জমিতে ধানের চারা লাগিয়েছি। এখন সেগুলো পানির নিচে ডুবে রয়েছে। আরও কয়েকদিন পানি থাকলে সম্পূর্ণভাবে চারা নষ্ট হয়ে যাবে।”
হাসনপুর গ্রামের হাসিম উদ্দিন বলেন, “১৫-২০ বছর আগে খালটি অনেক গভীর ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে পাশে বসতি গড়ে ওঠা ও ঝোঁপঝাড়ের কারণে পানি ধীরগতিতে প্রবাহিত হয়। ফলে বেড়াবিলে একদিন বৃষ্টি হলেও পানি কমতে তিন দিন লেগে যায়।”
কুতুবপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, “জমির ধান বিক্রি করেই সংসারের খরচ চলে। কিন্তু এবার বৃষ্টিতে গলা পানি হয়েছে বিলে। যে খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার কথা, তা এখন দখলের শেষপ্রান্তে।”
স্থানীয় সেলিম মিয়া বলেন, “বিগত ৫-৭ বছর ধরে এই অবস্থার কারণে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। খালটি দ্রুত খনন না করা হলে এলাকার অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে।”
ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাছরিন আক্তার বানু জানান, প্রায় ১৫-২০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হবে, সেখান থেকে সহযোগিতা পেলে কৃষকদের মাঝে বণ্টন করা হবে।
ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখলাক উল জামিল বলেন, “গৌরীপুরে খাল খনন না হওয়ায় কৃষকের ফসল হুমকির মুখে—এমন বিষয়ে আমরা অবগত নই। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আবেদন এলে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং অনুমোদন মিললে খননের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”