ভারতের রাজধানী দিল্লির দক্ষিণাঞ্চলীয় পূর্ব নিজামুদ্দিনে মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের ঐতিহাসিক সমাধিক্ষেত্রের গম্বুজ ধসে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দিল্লি দমকল বিভাগ জানায়, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও কয়েকজন চাপা পড়ে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধারকর্মীরা পাঁচটি লাশ উদ্ধার করেন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দমকলের পাঁচটি দল এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে।
কর্মকর্তারা জানান, ছুটির দিন হওয়ায় দুর্ঘটনার সময় সমাধিক্ষেত্রের ভেতরে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড় ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যে, ছোট সবুজ রঙের ভবনটির একপাশের ছাদ হঠাৎ ভেঙে পড়ে। তখন ভবনের ভেতরে ১৫-২০ জন উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে দারগাহর ইমামও ছিলেন।
দুর্ঘটনার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হচ্ছে, ধসে পড়া অংশটি ২৫ থেকে ৩০ বছরের পুরোনো। মৌসুমি বৃষ্টির ফলে কাঠামো দুর্বল হয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি বা কাঠামোগত ত্রুটিও দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দ্বিতীয় মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের সমাধি ১৫৬২ সালে তাঁর স্ত্রী হামিদা বানু বেগমের উদ্যোগে নির্মিত হয়। বেলেপাথরে তৈরি এই স্থাপনাটির নকশা করেছিলেন বুখারার স্থপতি মির্জা গিয়াস। এটি মুঘল ইতিহাসের প্রথম উদ্যান-সমাধিক্ষেত্র, যা পরবর্তীতে তাজমহলসহ বহু মুঘল স্থাপত্যে প্রভাব রেখেছে।
সমাধিক্ষেত্রটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত এবং মুঘল স্থাপত্যশৈলীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত। ১৫২৬ সালে প্রথম পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদিকে হারিয়ে বাবর দিল্লি দখল করেন। বাবরের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে হুমায়ুন সিংহাসনে বসেন। শের শাহ সুরির কাছে পরাজিত হয়ে দেশ ছাড়লেও শের শাহের মৃত্যুর পর হুমায়ুন পুনরায় দিল্লি দখল করেন। ১৫৫৬ সালে তাঁর মৃত্যুর পর ১৫৬২ সালে পুরানা কিল্লার কাছে এই সমাধি নির্মাণ শুরু হয়, যা তখন থেকেই দিল্লির অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।