স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ‘ফ্যাসিস্ট’ শেখ হাসিনাকে একই পাল্লায় মাপা হলে ফ্যাসিবাদ আড়ালে যাওয়ার সুযোগ পাবে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ জাসদ।
শুক্রবার বঙ্গবন্ধুর ৫০তম শাহাদাৎবার্ষিকীতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনায় দলের সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হক প্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের স্থপতি—এটি অমোঘ ঐতিহাসিক সত্য। স্বাধীনতার পর দেশে ফেরার আগেই তিনি বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় সেনাদের ফেরত পাঠানোর সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়ে তা বাস্তবায়ন করেছিলেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর তার শাসন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, নিজের ভুলের খেসারত তিনি ও পরিবারকে নির্মম মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দিতে হয়েছে। “বাংলাদেশ থাকলে বঙ্গবন্ধু থাকবেন, জয় বাংলা থাকবে। বঙ্গবন্ধু ও ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে একই পাল্লায় মাপা হলে ফ্যাসিবাদ আড়ালে যাবে।”
এবার বঙ্গবন্ধু হত্যার দিনটি এসেছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। তার বড় মেয়ে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বৈরশাসন ও আন্দোলনকারীদের হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়ে ভারতে আত্মগোপনে আছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিচার চলছে। ২৪ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে দমন-পীড়নে জড়িত থাকার অভিযোগে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, নেতারা কেউ কারাগারে, কেউ আত্মগোপনে, কর্মীরা ছন্নছাড়া।
এর মধ্যেই নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ফেসবুকে ১৫ আগস্টের কর্মসূচি দেয়। সজীব ওয়াজেদ জয় দেশবাসীকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে আহ্বান জানান। তবে আগের ৬ মাস পূর্তিতে ‘মুজিববাদের কবর’ ঘোষণা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর এবারও ৩২ নম্বর এলাকায় নিরাপত্তা বেষ্টনী, প্রবেশপথ বন্ধ, মানুষকে তল্লাশি ও হয়রানির ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ জাসদের তোপখানা রোডের অস্থায়ী কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আলোচনা সভায় ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা খাটো করতে চায়, তারা ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পুনর্বাসিত করার পথ তৈরি করছে। “৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই।” তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদ রুখতে আহ্বান জানান।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ডা. মুশতাক হোসেন, বক্তব্য দেন করিম সিকদার, আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, রোকনুজ্জামান রোকন ও মনজুর আহমেদ মনজু।
ইনু নেতৃত্বাধীন জাসদের শ্রদ্ধা
বঙ্গবন্ধু হত্যার ৫০তম বার্ষিকীতে ঢাকার গুলিস্তানে শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় জাসদের ইনু নেতৃত্বাধীন অংশ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ড শুধু বাংলাদেশের নয়, আধুনিক বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসেরও একটি কালো অধ্যায়।
দলটির মতে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন ও জাদুঘর স্বাধীনতার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। “আগুন, ভাঙচুর ও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ম্লান করা যাবে না।”
সভায় সভাপতিত্ব করেন শফিউদ্দিন উদ্দিন মোল্লা, বক্তব্য দেন মোহাম্মদ মোহসীন, মীর্জা মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, সাইফুজ্জামান বাদশা ও শরিফুল কবির স্বপন।