ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের অভিযোগ: আচরণবিধি লঙ্ঘন ও ভোটকেন্দ্রের সমস্যা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল প্যানেলের জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামীম জানিয়েছেন, অন্যদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দিতে দিতে তাদের প্রচারের জন্য সময়ের বড় অংশ খরচ হচ্ছে।

তিনি বলেন, “আমাদের দরকার ছিল প্রচার করা, শিক্ষার্থীদের কাছে যাওয়া, কিন্তু দিনের বড় একটি অংশ কেটে যাচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্টের অভিযোগ দিতে দিতে, কোনো প্রতিকার আমরা দেখছি না।”

ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান জানান, তারা ভোটকেন্দ্র সংখ্যা কম হওয়া, বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপ বন্ধ করা, কুয়েত মৈত্রী হলের রিটার্নিং কর্মকর্তার আচরণ এবং হিজাবোফোবিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক জসীম উদ্দিনকে চিঠি দিয়েছেন।

হামীম আরও বলেন, “মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুতেই ভিন্ন ছাত্রসংগঠন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে, বিভিন্ন ব্যানার পোস্ট করেছে। ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সেই ব্যানার এখনও আছে।”

আবিদুল ইসলাম খান বলেন, “নির্বাচনে প্রায় ৪০ হাজার ভোটারের জন্য কেন্দ্র মাত্র আটটি। এবার ভোট দিতে হবে ৪১টি। প্রায় সাত পৃষ্ঠার ব্যালটে প্রতিটি ভোট দিতে ৮–১০ মিনিট সময় লাগবে। স্বাভাবিকভাবে ঘণ্টায় মাত্র আটটি ভোট দেয়া যাবে। যদি সেখানে ২০টি বুথ হতো, তাহলে ঘণ্টায় ১৬০টি ভোট পড়ত। পুরো আট ঘণ্টার হিসাব করলে ১,২৮০ ভোট হবে।”

তিনি আরও বলেন, “গত ২০১৯ সালের নির্বাচনে কৃত্রিম লাইন তৈরি হয়েছিল, যার কারণে অনাবাসিক ছেলেমেয়েরা ভোট দিতে পারেনি। এবারও ভোর থেকেই ভোট দিতে সমস্যা হতে পারে, এটা নিয়ে ছেলেমেয়েদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।”

কুয়েত মৈত্রী হলের রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে আবিদুল বলেন, “যেখানে যে কোনো পে-স্লিপ বা বৈধ কাগজপত্র থাকলে হলে গিয়ে প্রচার চালানো সম্ভব, কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা রিফাত আরা প্রার্থীর বৈধ কাগজ থাকার পরও বলেছে, আবাসিক কার্ড ছাড়া প্রচার চালাতে পারবে না। এটা মোটেও কাম্য নয়।”

ছাত্রদলের দাবি, কিছু ফেইসবুক গ্রুপ ও পেজ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিটিআরসিকে চিঠি দিয়েছে, কিন্তু সেই গ্রুপগুলোর নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। আবিদুল বলেন, “এই গ্রুপগুলো অনবরত বিভিন্ন প্রার্থীর সম্পর্কে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। এটা নির্বাচনের মাঠকে শান্ত রাখছে না। যতক্ষণ পর্যন্ত বন্ধ হবে না, আমরা নিরাপদ অনুভব করছি না।”

‘হিজাবোফোবিয়া’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাবোফোবিয়া এবং নারী বিদ্বেষী কর্মকাণ্ড ইতিমধ্যে সক্রিয়। আমরা চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয় নারীদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ ক্যাম্পাস হোক। নারীরা যেখানে নিরাপদ থাকবে, সেটিই সেইফ ক্যাম্পাস।”

তিনি আরও জানান, “যে কোনো হেনস্থা, হিজাবকেন্দ্রিক হোক বা পশ্চিমা সংস্কৃতির কারণে হোক, সব প্রকারের অধিকার রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়কে আহ্বান জানাচ্ছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধ্যাকালীন আইন অনুসরণ করা হলে নারীরা রাত ৯–১০টার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সে আইন মানবে না।”

নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। এবারে ডাকসুর ২৮ পদে প্রার্থী হয়েছেন ৪৭১ জন। ভিপি পদে সর্বাধিক ৪৫ জন প্রার্থী হয়েছে। হল সংসদগুলোতে ভিপি-জিএসসহ ১৩টি পদে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ছেলেদের জন্য ১৩টি, মেয়েদের জন্য ৫টি হলে প্রার্থী হয়েছেন মোট ১,০৩৫ জন।