ঢাকার চানখাঁরপুলে গুলিতে নিহত শাহরিয়ার খান আনাসের লাশ নিয়ে বাসায় ফেরার সময় রক্তে শরীর ভেসে গিয়েছিল বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যে জানিয়েছেন তার মা সানজিদা খান দীপ্তি।
রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে তিনি এ সাক্ষ্য দেন। জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনে চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন সানজিদা। তিনি ছিলেন মামলার নবম সাক্ষী।
সানজিদা বলেন, ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট সকালে গেণ্ডারিয়ার ভাড়া বাসা থেকে বের হওয়ার আগে একটি চিঠি লিখে যান আনাস। চিঠিতে লেখা ছিল—“মা আমি মিছিলে যাচ্ছি। যদি না ফিরি তাহলে গর্বিত হইও।”
“ঠিক দুপুরে তার মৃত্যুর খবর পাই আমরা। পরে লাশ আনতে মিটফোর্ড হাসপাতালে যাই আমি, তার বাবা আর নানু। লাশ নিয়ে রিকশায় বাসায় ফেরার সময় আনাসের রক্তে আমাদের শরীর ভেসে গিয়েছিল।”
তিনি বলেন, লাশ বাসায় আনার পর হত্যার বিচার চেয়ে এলাকাবাসী মিছিল করেন। পরে ধুপখোলা মাঠে জানাজা হয়। সেখানে আনাসের সঙ্গে নিহত মেহেদী হাসান জুনায়েদের জানাজাও একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় আলেমের পরামর্শে রক্তাক্ত কাপড়ে গোসল ছাড়াই শহীদী মর্যাদায় দাফন করা হয় আনাসকে।
আনাসের মা জানান, তার ছেলে আন্দোলনকারী রাব্বী ও সৌরভের সঙ্গে ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহীদ মিনারের দিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু চানখাঁরপুলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখে পড়ে আন্দোলনকারীরা। র্যাব-পুলিশ গুলি ছুড়তে শুরু করলে প্রাণ বাঁচাতে বিভিন্ন গলিতে আশ্রয় নেন তারা।
“এক পর্যায়ে এক পুলিশ সদস্য আমার ছেলেকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলি বুকে লাগলে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আনাস। পরে কয়েকজন আন্দোলনকারী তাকে রিকশায় করে হাসপাতালে নেয়। রিকশাই ছিল তখনকার অ্যাম্বুলেন্স।”
তিনি আরও বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে গুলি চালানো এবং নির্দেশদাতাদের নাম জানতে পারেন তিনি।
সানজিদার দাবি, চানখাঁরপুলে হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ও রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম। তাদের নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছিলেন রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
“তারা সেদিন নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এমন ভয়াবহভাবে গুলি চালিয়েছিল, যেন মানুষ বাঁচতে না পারে। তাদের গুলিতেই আমার ছেলে আনাসসহ ছয়জন শহীদ হয়েছিল। এছাড়া এ গুলির নির্দেশদাতা ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।”
আনাসের মা এ আসামিদের ফাঁসির দাবি জানান।
পরে তাকে জেরা করেন আসামি আরশাদের আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন অভি, রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ও আসামিপক্ষের অন্য আইনজীবীরা।
সকালে এ মামলার চার আসামি—শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।