জাকসু: অবশেষে ভোটগণা শেষ, ফল ঘোষণা সন্ধ্যায়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক এবং নাটকীয়তার পর অবশেষে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে ২১টি কেন্দ্রের ভোট গোণা শেষ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সোহেল আহমেদ ও নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক লুৎফুল এলাহী দুপুর আড়াইটার দিকে গণনা শেষের কথা জানান।

তবে চূড়ান্ত ফলের জন্য সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। নির্বাচনের ফলাফল প্রস্তুত করতে সময় প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

দীর্ঘ ভোট গণনা

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান জানান, হাতে হাতে ভোট গণনার কারণে প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হয়েছে। তিনি বলেন, “জাকসু নির্বাচনে কোনো ভোট কারচুপি বা জালভোটের ঘটনা প্রমাণ করতে পারলে আমি চাকরি ছেড়ে দেব এবং পেনশনের টাকাও নেব না। কতিপয় বর্জনকারী ছাড়া কেউই বলবে না কারচুপি হয়েছে।”

‘স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে’ ভোট গণনার পুরো প্রক্রিয়া ক্যাম্পাসের চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে — নতুন কলা ভবন সংলগ্ন মহুয়া চত্বর, প্রীতিলতা হলের সামনে, বটতলা এবং ট্রান্সপোর্ট চত্বরে — চারটি জায়ান্ট স্ক্রিনে বা বড় পর্দায় সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। তবে প্রায় ৪৬ ঘণ্টা ধরে গণনা চলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।

নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও ভোটার

নির্বাচনের ভোটগ্রহণ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হওয়ায় প্রক্রিয়া কিছুটা বিলম্বিত হয়। ভোট গণনা শুরু হয় একই দিন রাত ১০টার পর।

এই নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১,৮৯৭ জন। প্রায় ৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। অর্থাৎ প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী ভোট দিয়েছেন।

অনিয়মের অভিযোগ ও পদত্যাগের হিড়িক

নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগে উত্তপ্ত ছিল ক্যাম্পাস। আর ভোটের দিন শেষ পর্যায়ে নানা অভিযোগ তুলে পাঁচটি প্যানেল বর্জনের ঘোষণা দেয়।

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে নির্বাচন কমিশনের সদস্য ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের (জাবি শাখা) সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার অনিয়ম, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অভাব এবং নানা অভিযোগের বিষয়ে কোনে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে পদত্যাগ করেন। তিনি সিনেট ভবনের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে এবং কমিশন এতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।”

আজ শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে নির্বাচন কমিশনের আরেক সদস্য বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের অনুষদ কমিটির সাবেক প্রতিনিধি ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা অনিয়মের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেন। তিনি শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সারাদিন ভোট গণনায় অংশ নিয়েছিলেন। শনিবার দুপুরে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, “জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে, যা স্বচ্ছ নির্বাচনের পরিপন্থী।”

আর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অভাব ও অনিয়মের অভিযোগে বিএনপিপন্থী তিনজন শিক্ষকও পদত্যাগ করেছেন। তারা হলেন—ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নাহরীন ইসলাম খান, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এবং অধ্যাপক শামীমা সুলতানা।

তারা ভোটের দিন বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান এবং সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তুলে বর্জনের ঘোষণা দেন। অর্থাৎ মোট পাঁচজন শিক্ষক এই নির্বাচনের প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান এই পদত্যাগের বিষয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “যারা পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তারাই পদত্যাগ করে জাকসুকে বিতর্কিত করতে চেয়েছে। যদি কোনো কমিশনারের অভিযোগ থাকে, তাহলে ভোটের দিন পদত্যাগ না করে এখন কেন? এ থেকেই বোঝা যায়, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এমন করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেনন, ‘কিছু বর্জনকারী দল ছাড়া অন্য কেউ কারচুপির অভিযোগ তুলছে না।’

নির্বাচনকে ঘিরে তিন দিন ধরে চলমান অনিয়মের অভিযোগ, বয়কট, পদত্যাগ এবং দীর্ঘ ভোট গণনার প্রক্রিয়া ক্যাম্পাসে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তবে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।