- বহিষ্কৃত ছাত্রনেতা ও ড্যাবের সদস্য ডা. জাভেদ আহমেদ নতুন করে চাঁদাবাজি ও সহকর্মীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে আলোচনায়।
একই ব্যক্তি দুই নামে পরিচিত—ডা. জাভেদ আহমেদ (আসল নাম মোহাম্মদ জাবেদ)। সম্প্রতি এক সহকর্মী চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় সাধারণ ডায়রী (জিডি নং ২২৪৫/২০২৫, তারিখ: ২৮ আগস্ট ২০২৫) করা হয়েছে। তিনি ঢাকা মেডিকেলের ৫২ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন এবং ছাত্রজীবনে বিভিন্ন সহিংস ঘটনার কারণে বহিষ্কারভোগী। পরে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এ যোগ দিয়ে ২০১৯ সালে ড্যাব অফিসে অস্ত্র প্রদর্শন ও ভাঙচুরের অভিযোগে সংগঠন থেকে বহিষ্কার হন। তবু বর্তমানে তিনি অন্য নামে ড্যাবের সদস্য হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন—জানিয়ে দিয়েছেন, তার কোনো বিএমডিসি নম্বর নেই।
ঘটনা ও অভিযোগ
ঢাকা মেডিকেলে নতুন নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসকদের কাছ থেকে ‘পার্টি ফন্ড’ নামে জনপ্রতি মাসিক ২০০০–৩০০০ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ আছে। হাসপাতালের আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং, বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকেও অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠছে। অভিযোগ অনুযায়ী, মাসের ৭ তারিখের মধ্যে অর্থ না দিলে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি ও লাঞ্ছিত করা হতো।
বিসিএস পরিচয় ও সরকারি তথ্য
সরকারি গেজেট অনুসারে মোহাম্মদ জাবেদ ২৮তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচে উত্তীর্ণ হয়ে ২০১১ সালের ২৮ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। ৯ আগস্ট ২০১১ তিনি শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব নেন। পরে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে মৌলিক প্রশিক্ষণে যোগদানের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তা পালন করেননি; এই ঘটনায় বিভাগীয় মামলা হয় কিন্তু শুনানি শেষে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েই তিনি বর্তমানে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে কর্মরত আছেন—তবে তিনি নিজে এই বিসিএস পরিচয় অস্বীকার করেও আছেন।
লাঞ্ছনার ঘটনায় সূত্র ও সময়সূচি
অভিযোগ মোতাবেক, ২০২৫ সালের ২৭ আগস্ট রাত প্রায় ১১টায় কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. আহসান হাবিবকে নিউ ইস্কাটন এলাকায় লাঞ্ছিত করা হয়। ডা. আহসান দাবি করেছেন, তিনি পূর্বেও জাভেদের একাধিকবার হুমকির শিকার হয়েছেন; ঘটনার পর জিডি করা হয়েছে।
শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের বক্তব্য
কয়েকজন নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক জানিয়েছেন—প্রাথমিকভাবে ড্যাব ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার প্রেসিডেন্ট চিঠি দিয়ে সবাইকে চাঁদা না দিতে বললেও ভয়ের কারণে কিছু চিকিৎসক নিয়মিতভাবে অর্থ পরিশোধ করে যাচ্ছেন। অনেকে জানান, চাঁদার চাপ না মানার কারণে হুমকি ও শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন।
বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্য
- ডা. ফখরুল (সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৯৯৯–২০০৩): “ছাত্র সংসদে থাকাকালীন যৌথবাহিনী তাকে আটক করেছিল; পরে কিছুদিন জেলেও ছিলেন।”
- ডা. জাভেদ (নিজের বক্তব্য): “আমি যদি কারও কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে থাকে বা টেন্ডারবাজি করে থাকে, তাদের সাক্ষাৎকার নিন; প্রমাণ দেখালে আমি উত্তর দেব। আমি ড্যাবের সদস্য নই এবং ২৮তম বিসিএস ক্যাডারও নই। আমার নামে কোনো সংবাদ হলে আমি মানহানির মামলা করব।”
- এ জেড এম জাহিদ হোসেন (বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও সাবেক মহাসচিব): তিনি জানিয়েছেন যে ড্যাবের সদস্যগুলোর ব্রাঞ্চ এবং কেন্দ্রীয় নম্বর থাকা প্রয়োজন; সদস্যতার নিয়ম-শর্ত ও ভোটার তালিকা সম্পর্কে নির্বাচন কমিটি ও সংশ্লিষ্টরা ভালো বলতে পারবেন।
- সাবেক বিভাগীয় প্রধান: “বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছাড়া কেউ রেজিস্টার্ড মেডিকেল প্র্যাকটিশনার হতে পারে না; নম্বর ছাড়া কোনো পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য হওয়া কঠিন। একজন সরকারি কর্মকর্তা কীভাবে দুই নাম ব্যবহার করেন—এটি সরকারি সংস্থা যাচাই করবে।” তিনি ২০০২ ও ২০১৯ সালের বহিষ্কার প্রসঙ্গও পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং বলেছেন—“পরিস্থিতি ক্রিটিক্যাল; সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
- ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার (ড্যাব উপদেষ্টা): “হ্যাঁ, তিনি ড্যাবের মেম্বার বলে শুনেছি। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি সম্পর্কে আমরা শুনেছি কিন্তু প্রমাণ পাইনি—প্রমাণ থাকলে আনুন।”
- ডা. হারুন আল রশিদ (ড্যাব কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি সভাপতি): “জাবেদ ড্যাবের মেম্বার; বিএমডিসি নম্বর না থাকার বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই—নির্বাচন কমিটির কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে।”
- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান (ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক): “সে আমাকে টেন্ডার না পাওয়ার অভিযোগ জানাতে এসেছিল—আমি স্পষ্ট করে বলেছি, সব টেন্ডার ই-জিপি মাধ্যমে। পরে সে আমার স্টাফদের ধমক দিয়েছে; কখনও মারধরকথাও শোনা যায়। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করতে দেখিনি।”
ড্যাবের সাধারণ সম্পাদক ডা. শাকিল ও নির্বাচন/সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির সদ্যসাবেক আহ্বায়ক ইসমাইল জাবিউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোনে পাওয়া যায়নি—তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।