রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পোষ্য কোটা’ নিয়ে আন্দোলন ও উত্তেজনা, জুবেরী ভবনে ধস্তাধস্তি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রাকসু নির্বাচনের প্রচারের মধ্যেই ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহালের দাবিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে, যার ফলে কয়েকজন আহত হন।

এ ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জুবেরী ভবনে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাইন উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান, রেজিস্ট্রার ইফতেখারুল আলম মাসুদসহ কয়েকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে আটক করে বিক্ষোভ চালাচ্ছেন। জুবেরী ভবনের সামনে ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্রদলসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থী মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হন। শিক্ষার্থীরা ভবনের ভিতরে ও বাইরে বসে আলোচনাও করেন।

অপরদিকে ‘পোষ্য কোটা’র জন্য আন্দোলনকারী শিক্ষক ও কর্মকর্তারা উপাচার্য অধ্যাপকের সঙ্গে তার বাসভবনে বৈঠক করেন। শুক্রবার বিকাল থেকে নয় শিক্ষার্থী ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহালের প্রতিবাদে প্রশাসন ভবনের সামনে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।

১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ হুঁশিয়ারি দেন যে, যদি ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহাল না করা হয়, তাহলে তারা ২১ সেপ্টেম্বর থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করবেন। এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার বিকালে ভর্তি কমিটির সভায় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের শর্তসাপেক্ষে ‘পোষ্য কোটা’য় ভর্তির সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানায়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের শিক্ষার্থী আবু রায়হান জনি বলেন, “মীমাংসিত একটি ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসে আজকের ঘটনা তৈরি হয়েছে। আজকের ঘটনার পর নির্বাচন আদৌ হবে কি-না তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।”

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আবু ইয়াকুব বলেন, “একদিকে রাকসু, অন্যদিকে প্রশাসন। উপাচার্য একটিও মানতে পারবে না। কোটা বাতিল করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতিতে যাবে, কোটা রাখলে শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না। এ অবস্থায় উপাচার্যকে হয়তো পদত্যাগ করতে হবে। ডাকসু ও জাকসুতে একটি সংগঠনের ভরাডুবি দেখে রাবিতেও শিক্ষকরা এই ইস্যু সামনে এনেছেন।”

ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারদিন বলেন, “এসবের মূলে আসলে রয়েছে রাকসু। যারা কর্তৃপক্ষে আছেন, তারা চাচ্ছেন না রাকসু হোক। কারণ রাকসু হলে ক্ষমতার একটি অংশ শিক্ষার্থীদের হাতে চলে যাবে। ক্ষমতা ধরে রাখতে এই ঘটনা তৈরি হয়েছে।”

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী কায়সার আহমেদ বলেন, “পোষ্য কোটা অযৌক্তিক। শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে তাদের সন্তানদের কোটায় ভর্তি হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা প্রান্তিক খেটে খাওয়া কৃষকের সন্তানদের জন্য হওয়া উচিত। আজকের ঘটনা রাকসু বানচালের চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।”

এর আগে ২ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য স্থায়ীভাবে ‘পোষ্য কোটা’ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন। ১৩ আগস্ট থেকে ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহালসহ আট দফা দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে ২৪ আগস্ট প্রশাসনের আশ্বাসে তিন দিনের অবস্থান ধর্মঘট স্থগিত ঘোষণা করা হয়।