আড়াইহাজারে ‘ডাকাত সন্দেহে’ যুবককে পিটিয়ে হত্যা

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে আট মামলার আসামি, ইউপি সদস্যের পর এবার এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ‘ডাকাত সন্দেহে’ তাকে আটকের পর গ্রামবাসী পিটিয়ে হত্যা করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বুধবার ভোরে উপজেলার বিশনন্দী ইউনিয়নের দড়ি বিশনন্দী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী।

নিহত ৩২ বছর বয়সী নবী হোসেন পাশের উচিৎপুরা ইউনিয়নের পশ্চিম আগুকান্দি গ্রামের লইক্কা হোসেনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে পূর্বে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয়দের বরাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহেদী বলেন, বুধবার ভোরে দড়ি বিশনন্দীর একটি বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা চলে। ওই সময় ডাকাতদল বাড়ির অন্তত চারজনকে কুপিয়ে জখম করে। আহতরা হলেন গ্রামের ইলিয়াস মিয়ার স্ত্রী কুলসুম বেগম (৪০), ছেলে নাঈম মিয়া (১৮), তাদের আত্মীয় ফারুক মিয়া (৪৫) ও আবুল হোসেন (২৮)। তাদের মধ্যে কুলসুম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তিনি আরও জানান, “পরে গ্রামে ডাকাত পড়েছে জানিয়ে স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে গ্রামবাসী ডাকাতদলকে ধাওয়া করে এবং একজনকে ধরে ফেলে। তাকে গ্রামবাসী মিলে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।”

প্রাথমিক তদন্তের বরাতে আড়াইহাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইফুদ্দিন বলেন, “ভোররাত আড়াইটার দিকে বৃষ্টি পড়ছিল। তখন কুলসুম বেগম বৃষ্টির পানিতে যাতে মাটির চুলা ভিজে না যায় সে ব্যবস্থা করতে রান্নাঘরে যান। সেখানে গিয়ে তিন-চারজন লোককে দেখে ‘ডাকাত-ডাকাত’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় ঘর থেকে অন্যরা বেরিয়ে এলে ডাকাতদল তাদের কুপিয়ে জখম করে।”

তিনি আরও বলেন, পরে রাত ৩টার দিকে মাইকে ঘোষণার পর গ্রামবাসী জড়ো হয়ে ডাকাতদের বিভিন্ন জায়গায় খুঁজতে থাকে। পরে একটি বিলের মধ্যে নবীকে পেয়ে তাকে পিটুনি দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ওই বিল থেকেই নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে এবং এ ঘটনায় আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

এনিয়ে গত এক মাসে আড়াইহাজার উপজেলার দুই ইউনিয়নে পৃথক ঘটনায় তিনজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত সোমবার সকালে চাঁদা দাবির অভিযোগ তুলে ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সোহেলকে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তবে চাঁদাবাজির অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করে সোহেলের স্বজনরা বলছেন, মাদক ব্যবসার বিরোধিতা করায় পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, সোহেলের বিরুদ্ধে মাদক, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ অন্তত ১৫টি মামলা রয়েছে। গত ১৩ জুন কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় র‌্যাব-১১ এর এক অভিযানে গ্রেপ্তারও হন তিনি। পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন।

এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের প্রভারকরদী গ্রামের বাসিন্দা মো. আয়নাল হোসেনকে তার বাড়ির ১০০ গজের মধ্যেই পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ৪২ বছর বয়সী আয়নালের বিরুদ্ধে ডাকাতি, ধর্ষণসহ অন্তত আটটি মামলা ছিল বলে জানিয়েছিল পুলিশ।