টানা ছুটিতে ঢাকা ছাড়তে যাত্রীদের ভোগান্তি: যানজট ও বৃষ্টিতে দুর্ভোগ

টানা চার দিনের সরকারি ছুটি পেয়ে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেন নগরবাসী। এই যাত্রা পরের দিনও অব্যাহত থাকে। তবে সড়কে বাড়তি যানবাহন, ভারি বৃষ্টি ও মাঝপথে গাড়ি বিকল হওয়ার মতো নানা কারণে বিভিন্ন মহাসড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি হয়।

পূজার ছুটিতে অনেকে বাড়ির পথে রওনা হওয়ায় বুধবার ঢাকায় যাত্রীসংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় কম ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে টানা ছয় ঘণ্টা বৃষ্টির কারণে নগরবাসীকে জলজটে ভুগতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে সাধারণ ছুটি, এবং বুধবার সরকার নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করায় সরকারি কর্মচারীরা শুক্রবার ও শনিবারের সঙ্গে মিলিয়ে চারদিনের বিশ্রতি পান।

চার দিনের এই ছুটি কাটাতে মঙ্গলবার দুপুরের পর ঢাকা ছাড়তে শুরু করেন যাত্রীরা। ঢাকার বিভিন্ন বাস টার্মিনাল থেকে টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জসহ ময়মনসিংহ বিভাগের এবং উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে বাস ছাড়ে।

মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে দেখা যায়, বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের ভিড়। ময়মনসিংহ রুটের ইউনাইটেড পরিবহনের কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন যাত্রীরা। সোহেল রানা নামের এক যাত্রী বলেন, “লম্বা ছুটি পাইছি। ভাবলাম ফ্যামিলির লোকজন নিয়ে বাড়ি ঘুরে আসি। গতকাল বিকালে ভিড় বেশি ছিল, তাই আজ যাচ্ছি।”

কাউসার আহমেদ নামের আরেক যাত্রী ইউনাইটেড পরিবহনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, “ঘণ্টাখানেক হলো দাঁড়িয়ে আছি, বাস নেই। কাউন্টার জানাচ্ছে, একটা বাস নাকি ভোগড়া ছাড়াইছে। ওই বাসের জন্য অপেক্ষায় আছি।”

যাত্রীদের ভিড় কেমন ছিল জানতে চাইলে জামালপুর রুটের রাজিব পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক বলেন, “পূজার ছুটিতে মানুষ বাড়ি যাচ্ছে, তাই গতকাল কিছুটা ভিড় ছিল। আজ তেমন ভিড় নেই।” কিশোরগঞ্জ রুটের উজানভাটি পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক মাহমুদুল হাসান বলেন, “ঈদের সময় যেমন ভিড় হয়, পূজায় তেমন ভিড় হয় না। তবে অন্য সময়ের তুলনায় যাত্রীর চাপ কিছুটা বেড়েছে।”

পথে পথে যানজট

মঙ্গলবার বিকাল থেকে ঢাকা ছাড়তে শুরু করার পর বিভিন্ন মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যানজট তৈরি হয়। বুধবার দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে চিটাগাং রোড, কাঁচপুর হয়ে সোনারগাঁও পর্যন্ত যানজট ছিল।

মঙ্গলবার রাতে ভারি বৃষ্টি এবং সোনারগাঁওয়ের দড়িকান্দি এলাকায় একটি ট্রাক বিকল হওয়ায় চট্টগ্রামমুখী লেনে যানজট তৈরি হয়। সড়কের যানজটের হালনাগাদ তথ্য ফেসবুক গ্রুপ ‘ট্রাফিক এলার্ট’ এ যাত্রীরা শেয়ার করেছেন।

সাইমুন নূর লিখেছেন, “সকাল ৯টায় ওয়ারি থেকে রওনা হলাম। এখন বাজে দুইটা ১৯ মিনিট, কাঁচপুরে পৌঁছেছি। সায়েদাবাদ থেকে কাচপুর পর্যন্ত লেগেছে আড়াই ঘণ্টা।”

মাহমুদুল হাসান খান বলেন, “গত রাত ২টায় আরামবাগ থেকে বাসে উঠেছি। আজ দুপুর সোয়া দুইটায় মাত্র সাতকানিয়া পৌঁছেছি।”

কুমিল্লার সাংবাদিক গাজীউল হক সোহাগ লিখেছেন, “বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে রাত দেড়টায় ঢাকা থেকে বাসে উঠেছি। ভোর ৫টায় মুন্সিগঞ্জের ভবেরচর পৌঁছেছি। রাত ৩টা থেকে ভোর পাঁচটা ৫০ মিনিট পর্যন্ত এক জায়গায় বসে ছিলাম। বাসে সিট নড়বড়ে, জানালা বন্ধ, গরম ও মশা কামড়াচ্ছে। পাশে নাক ডাকা শব্দ, মোবাইলে রিলসের শব্দ।”

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি আবদুল কাদির জিলানী বলেন, “দুপুর পর্যন্ত সড়কে যানবাহনের ব্যাপক চাপ ছিল। পূজার ছুটিতে গাড়ির চাপ প্রচুর, বাম্পার টু বাম্পার। রাতে অনেক বৃষ্টি হয়েছে, এছাড়া একটি গাড়ি ভোর রাতে নষ্ট হয়েছিল। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।”

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে বরপা এবং ঢাকা বাইপাস সড়কের মদনপুর, মীরেরটেক বস্তল এলাকায়ও বুধবার দুপুরে যানজট দেখা দেয়।