প্রিন্স অব ওয়েলস উইলিয়াম জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে রাজা হলে তিনি রাজতন্ত্রে পরিবর্তন আনবেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার তিনি বেশি খোলামেলা অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।
অভিনেতা ইউজিন লেভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উইলিয়াম বলেন, রাজা হিসাবে তার ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে তিনি পরিবর্তনের পথে হাঁটতে চান।
“পরিবর্তন যে আমার এজেন্ডার মধ্যে আছে তা নিশ্চিন্তে বলা যায় বলে মনে করি আমি। ভালোর জন্য পরিবর্তন, আমি একে সাধুবাদ জানাই, আমি সেই পরিবর্তনকে পছন্দ করি। আমি একে ভয় পাই না, কিছু পরিবর্তন আনতে পারবো এই ভাবনা আমাকে উদ্দীপ্ত করে। একেবারে আমূল পরিবর্তন নয়, তবে পরিবর্তন, যা হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি,” বলেন ব্রিটিশ সিংহাসনের এ উত্তরাধিকারী।
উইলিয়াম এসব বলেছেন লেভিকে উইন্ডসর প্রাসাদ ঘুরিয়ে দেখানোর সময়। অভিনেতার সঙ্গে দেখা করতে বৈদ্যুতিক স্কুটারে চেপে আসেন প্রিন্স অব ওয়েলস। তিনি জানান, প্রাসাদের চারপাশে চলাচলের জন্য সাধারণত এই স্কুটার ব্যবহার করেন।
উইলিয়াম বলেন, তিনি ‘আমেরিকান পাই’ সিরিজের চলচ্চিত্রের ভক্ত, যেখানে লেভি দীর্ঘ-ভুক্তভোগী বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
প্রাসাদের প্রাচীন ঘরগুলো ঘুরে দেখানোর সময় প্রিন্স উইলিয়াম তার পারিবারিক ইতিহাস নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন,
“আমার মনে হয়, আপনি যদি সতর্ক না হন তাহলে ইতিহাস আপনার ওপর সত্যিকারের ভার হয়ে আসতে পারে, বাধা সৃষ্টি করতে পারে, আপনার দমবন্ধ লাগতে পারে, মনে হতে পারে আপনি অনেক বেশি বিধিনিষেধে আটকে আছেন। এ কারণেই বর্তমানে বাস করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি আমি।”
৪৩ বছর বয়সী উইলিয়াম ঐতিহ্যের গুরুত্বের ওপর জোর দিলেও বলেন, রাজতন্ত্রকে প্রাসঙ্গিক রাখার প্রশ্ন তুলতে তিনি ভয় পান না।
কথোপকথনের একপর্যায়ে প্রিন্সকে তার পারিবারিক কুকুর অর্লাকে নিয়ে হাঁটতে বের হতে দেখা যায়। দুজনের আলোচনায় উঠে আসে পরিবার, সন্তান, গণমাধ্যমের হস্তক্ষেপ এবং অ্যাস্টন ভিলা ফুটবল ক্লাবের ভক্ত হওয়ার প্রসঙ্গ। এসময় বারবার এসেছে বাবা রাজা চার্লস এবং স্ত্রী কেট মিডলটনের ক্যান্সার মোকাবেলার প্রসঙ্গও।
উইলিয়াম লেভিকে নিয়ে যান প্রাসাদের কাছের টু ব্রিউয়ারস পাবে। সেখানে অনানুষ্ঠানিক পরিবেশে তিনি খোলামেলা আলোচনা করেন তার পরিবারকে নিয়ে, বিশেষ করে কেট মিডলটনের অসুস্থতার সময় সন্তানরা কীভাবে পরিস্থিতি সামলেছে তা নিয়ে।
যদিও সাক্ষাৎকারে ভাই প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে সম্পর্কের প্রসঙ্গ আসেনি, তবে একবার তার নাম উল্লেখ করেন উইলিয়াম। তিনি বলেন,
“অতীতের এমন কিছু চর্চা যার মধ্য দিয়ে হ্যারি ও আমি বেড়ে উঠেছি, তাতে আর ফিরতে হবে না বলেই আমি আশা রাখি। ওই ধরনের পরিস্থিতিতে যেন ফিরতে না হয় তা নিশ্চিতে আমি সম্ভব সবকিছুই করবো।”
লেভি পরে বলেন, প্রিন্স উইলিয়ামকে এতটা খোলামেলা আলাপ করতে দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছেন।
“আমার কাছে, এটা ছিল কেবল এক কথোপকথন। এটা থেকে কোনো ধরনের স্কুপ বা খবর বের করার কথা ভাবিইনি আমি। তিনি আমাকে তার ভাবনা কী তা বলছিলেন, অনেক কিছু নিয়েই আমরা আড্ডা দিয়েছি। এটা আমার জন্য ছিল পুরোপুরি এক পরাবাস্তব দিন।”
সাক্ষাৎকারের শেষ বেলায় উইলিয়াম বলেন, তিনি এমন এক পৃথিবী গড়ে তুলতে চান যা তার সন্তানদের গর্বিত করবে।
“আপনি জানেন, জীবন আমাদের পরীক্ষাও নেয় এবং কখনো কখনো এটা বেশ চ্যালেঞ্জিং, এবং সেটি উৎরে যাওয়ার মাধ্যমেই আমরা তৈরি হই। আমি আমার স্ত্রী ও বাবাকে নিয়ে গর্বিত, যেভাবে তারা গত বছর সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। আমার সন্তানরাও দুর্দান্তভাবে সামলেছে।”