জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের এক বছরে মুনাফা ১৬ কোটি টাকা ছাড়াল

গ্রাহকের কিস্তির টাকা বিনিয়োগ করে গত এক বছরে ১৬ কোটি ৩৩ লাখ ৪ হাজার ২৩ টাকা ৭৭ পয়সা মুনাফা করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।

সোমবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের তৃতীয় সভায় এ তথ্য জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন পেনশন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। সভায় পেনশন পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

সভার আলোচ্য সূচির বরাত দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পেনশন স্কিমে জমা অর্থ থেকে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে মুনাফা হয়েছে ১৬ কোটি ৩৩ লাখ ৪ হাজার ২৩ টাকা ৭৭ পয়সা। পরিচালনা পর্ষদে মুনাফার এই পরিমাণ অনুমোদিত হওয়ায় বিনিয়োগ সময়কালের ভিত্তিতে হিস্যা অনুযায়ী বিনিয়োগ মুনাফা গ্রাহকদের পেনশন হিসাবে জমা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গ্রাহকরা তাদের পেনশন আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে প্রাপ্ত মুনাফার পরিমাণ দেখতে পারবেন।

বিগত অর্থবছরে সর্বোচ্চ মুনাফার হার ছিল ১১ দশমিক ৬১ শতাংশ। তবে মুনাফার খাতগুলো বিস্তারিত জানায়নি অর্থ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে বন্ডসহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে পেনশন স্কিমের অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে।

গ্রাহকের ধরন ও বিনিয়োগের সুবিধার্থে পেনশন স্কিমকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে—প্রবাসীদের জন্য ‘প্রবাসী স্কিম’, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জন্য ‘প্রগতী স্কিম’, স্বকর্ম ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মীদের জন্য ‘সুরক্ষা স্কিম’ এবং স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ‘সমতা স্কিম’।

২০২৩ সালের অগাস্টে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ চালু করে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হলেও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এতে যুক্ত হয়নি। ফলে শুরু থেকেই চারটি স্কিম নিয়েই চলছে জাতীয় এই কর্মসূচি।

সুরক্ষা স্কিমে কিস্তির হার বৃদ্ধি

স্বকর্মে নিয়োজিতদের জন্য সুরক্ষা স্কিমে বর্তমানে সর্বোচ্চ কিস্তির হার ছিল ৫ হাজার টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, এই স্কিমে যেমন নিম্ন আয়ের লোক রয়েছেন, তেমনি উচ্চ আয়ের লোকও আছেন। উচ্চ আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে প্রগতী স্কিমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সুরক্ষা স্কিমে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা কিস্তি জমার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদন করা হয়েছে।

পাশাপাশি আউটসোর্সিং কর্মীদের জন্য বেসরকারি চাকরিজীবীদের ক্যাটাগরি ‘প্রগতী স্কিমে’ যুক্ত হওয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে। এই স্কিমের সর্বনিম্ন কিস্তির হার এক হাজার টাকা হলেও আউটসোর্সিং কর্মীদের জন্য তা ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে মাসিক চাঁদার পুরোটাই আউটসোর্সিং কর্মীকেই দিতে হবে; সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো অর্থ নেওয়া হবে না।

সভায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ইসলামিক সংস্করণ চালুর বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে বলা হয়, এ সংক্রান্ত ভালো অভিজ্ঞতাগুলো পর্যালোচনা করে একটি ধারণাপত্র তৈরির কাজ সম্পন্ন করে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ইসলামিক ভার্সন চালুর উদ্যোগ নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

এছাড়া সভায় পেনশন স্কিমে বীমা সুবিধা চালুর বিষয়েও পরামর্শ দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয় জানায়, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বীমা সুবিধা চালুকরণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে। সঠিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এ বিষয়ে ধারণাপত্র তৈরির কাজ জরুরি ভিত্তিতে সম্পন্ন করতে পরিচালনা পর্ষদ জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিয়েছে।

গতি কমছে?

কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১৭ অগাস্ট পর্যন্ত জাতীয় পেনশন স্কিমে যুক্ত হয়েছিলেন ৩ লাখ ৭২ হাজার ৪০১ জন। তাদের মোট জমার পরিমাণ ছিল ১৩১ কোটি টাকা।

২০২৪-২০২৫ অর্থবছর শেষে বা গত ৩০ জুন পর্যন্ত সর্বমোট ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৯৮৭ জন মাসিক কিস্তি দিয়েছেন। অর্থবছরের প্রারম্ভিক স্থিতিসহ তাদের কিস্তির মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮৭ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার ৫৪ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে সদস্য বেড়েছে ১ হাজার ৫৮৬ জন, আর কিস্তির পরিমাণ বেড়েছে ৫৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

সভায় জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দীন খানসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।