চট্টগ্রাম জেলার গণতন্ত্রী পার্টির সহ-সভাপতি স্বপন সেন মারা গেছেন। শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি অকৃতদার ছিলেন।
ন্যাপের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাশগুপ্ত জানান, বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় কয়েকদিন ধরে স্বপন সেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শুক্রবার ভোরে তিনি মারা যান। নগরীর বলুয়ার দীঘির পাড় মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
ষাটের দশকে ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে স্বপন সেনের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-এর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে তিনি গণতন্ত্রী পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ চট্টগ্রামের নানা সামাজিক ও নাগরিক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি। পাশাপাশি তিনি উদীচীসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
শুক্রবার বিকেলে স্বপন সেনের মরদেহ নগরীর চেরাগি পাহাড়ে নেওয়া হয়। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক সুভাষ দে বলেন, “স্বপন সেন এদেশের বাম রাজনীতির ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনীতির একজন উজ্জ্বলতম মানুষ ছিলেন। উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস, সঙ্গীত, ক্রীড়া—সব বিষয়ে তার অগাধ জ্ঞান ছিল।”
চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা বলেন, “স্বপন সেন মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি ও প্রগতিশীলতাকে অন্তরে লালন করতেন। তিনি নির্মোহ জীবনযাপন করেছেন। তার মৃত্যুতে আমরা মুক্তিযুদ্ধ ও সমাজতন্ত্রের এক লড়াকু সৈনিককে হারালাম।”
কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, “নাগরিক হিসেবে স্বপন সেনের প্রতি আমাদের যে দায়িত্ব ছিল, তা আমরা পালন করতে পারিনি। শেষ জীবনে তিনি একাকিত্বে দিন কাটিয়েছেন। আজ শেষ যাত্রার দিনে আমরা তার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।”
পরিবারের পক্ষ থেকে প্রয়াত স্বপন সেনের ভাইপো, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অঞ্জন কুমার সেন তার কাকার স্মৃতিচারণ করেন।
পরে সিপিবি, ন্যাপ, গণতন্ত্রী পার্টি, উদীচী চট্টগ্রাম, বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি, চট্টল ইয়ুথ কয়ার, রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নসহ আরও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিবি নেতা অমিতাভ সেন, সংস্কৃতিজন অনুপ সাহা, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শ্রেয়সী রায়, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি নাজিমউদ্দিন শ্যামল, বিএফইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক মহসীন কাজী, উদীচী চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্ত, সহ-সভাপতি প্রবাল দে, নাট্যকর্মী সাহিদ উদ্দিন, অধ্যাপক শিবপ্রসাদ সুর, আলোকচিত্রী কমল দাশ ও সাংস্কৃতিক সংগঠক রুবেল দাশ প্রিন্স।
স্বপন সেনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাহআলম, চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া।