গাজার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্যারিসে বৈঠক, যুদ্ধবিরতির পর শুরু হয়েছে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার পর ভূখণ্ডটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বৈঠক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ইউরোপীয় ও আরব দেশগুলো। বৃহস্পতিবার তারা এই বৈঠক করে। এদিন ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাস এবং ইসরায়েল ট্রাম্প প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম দফায় রাজি হয়।

এরপর গাজায় এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার, আর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। তবে চুক্তির একটি অংশ কেবল বাস্তবায়ন হচ্ছে। বাদবাকি চুক্তির আরও কিছু বিষয় নিয়ে রয়ে গেছে প্রধান কিছু প্রশ্ন—যেমন, বিধ্বস্ত গাজা কে শাসন করবে, কীভাবে ভূখণ্ডটি আবার নতুন করে গড়ে তোলা হবে, হামাস নিরস্ত্র হবে কিনা ইত্যাদি। হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ইসরায়েলের প্রধান দাবি, কিন্তু হামাস এখনও এই শর্ত মেনে নেয়নি।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, গাজায় যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে কীভাবে অবদান রাখা যায় সে বিষয়গুলো নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, “গাজার নিরাপত্তা, শাসন, পুনর্গঠন এবং মানবিক ত্রাণের মতো মূল বিষয়—যেগুলোতে আমরা ভূমিকা রাখতে চাই—সে বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রকেও জানানো হবে যাতে তারা সমন্বয় করতে পারে।”

গত মাসে জাতিসংঘ সম্মেলনে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের দিকে যাওয়ার পদক্ষেপের রূপরেখা সম্বলিত ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়েছিল। হামাসকে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বানও জানানো হয়। তবে ইউরোপীয় ও আরব দেশগুলোর কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এখনও কিছু ফাঁক রয়ে গেছে যেগুলো পূরণ করা প্রয়োজন। তাদের মতে, লক্ষ্য হচ্ছে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা, যাতে যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তির পথে আগানোর সুযোগ হারিয়ে না যায়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কায়া কাল্লাস সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের যুদ্ধের পরের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা দরকার, যাতে সেটি টেকসই হয়।”

প্যারিসের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতারের প্রধানমন্ত্রী, মিশর ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও—যারা হামাসকে চুক্তিতে রাজি করাতে ভূমিকা রেখেছেন। বৈঠকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে, তা হলো গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন এবং শান্তিরক্ষী বাহিনীর জন্য জাতিসংঘের ম্যান্ডেট পাওয়া।

কূটনীতিকদের মতে, ইন্দোনেশিয়াসহ আরও অনেক দেশ এই বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শান্তি পরিকল্পনার আওতায় বহুজাতিক এই বাহিনী ধীরে ধীরে মোতায়েন করা হবে যদি একটি চুক্তি হয়। বাহিনী মোতায়েনের জন্য জাতিসংঘের অনুমোদনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সহযোগিতাও দরকার হবে।

এই বাহিনী গাজায় যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ ছাড়াও হামাসের নিরস্ত্রীকরণ দেখভাল করবে এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্ব হস্তান্তরেও সহায়তা করবে। ফ্রান্স ও ব্রিটেন ইতোমধ্যে এই বাহিনীর ম্যান্ডেটের জন্য জাতিসংঘে আলোচনা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন কূটনীতিকরা।