ভারতের হামলার প্রতিক্রিয়ায় বুধবার দিনভর সীমান্ত–সংলগ্ন এলাকাগুলোতে গোলাবর্ষণ চালিয়েছে পাকিস্তানি সেনারা। এতে এক ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।
নিহত সেনার নাম দিনেশ কুমার। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি রাত ১১টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। দিনেশ কুমারের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চলমান সীমান্ত সংঘাতে নিহত ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে। তাঁদের মধ্যে ১২ জনই বেসামরিক নাগরিক।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৬ কোর বা হোয়াইট নাইট কোর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে জানায়, ‘হোয়াইট নাইট কোরের জিওসি ও সব সদস্য ৫ ফিল্ড রেজিমেন্টের ল্যান্স নায়েক দিনেশ কুমারের চূড়ান্ত আত্মত্যাগকে সম্মান জানায়। তিনি ৭ মে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণের সময় প্রাণ হারিয়েছেন। পুঞ্চ সেক্টরে নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে চালানো হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছি আমরা।’
পাকিস্তানি বাহিনী সারা দিন সীমান্তবর্তী এলাকায় গোলাবর্ষণ চালায়, বিশেষ করে পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুঞ্চ অঞ্চলে ব্যাপক গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। এতে প্রায় ৪০ জন আহত হয়েছেন।
ভারতীয় সেনা কর্মকর্তারা জানান, এই গোলাবর্ষণের যথাযথ জবাব দেওয়া হচ্ছে। পাকিস্তান ও পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর হামলার পর থেকেই সীমান্তজুড়ে ভারী গোলাবর্ষণ শুরু করে পাকিস্তান।
পুঞ্চ জেলার কৃষ্ণাঘাটি, শাহপুর ও মানকোট এবং রাজৌরি জেলার লাম, মাঞ্জাকোট ও গম্ভীর ব্রাহ্মণা এলাকায় সবচেয়ে বেশি গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছে।
উত্তর কাশ্মীরের বারামুল্লার উরি সেক্টর ও কুপওয়ারার তাংধার সেক্টরেও পাকিস্তানের তীব্র গোলাবর্ষণে একাধিক গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, পাকিস্তানি সেনার ছোড়া গোলা বারামুল্লা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে গিঙ্গাল গ্রামে আঘাত হানে। এতে অন্তত ১১ জন আহত হন, যাঁদের বেশিরভাগই সালামাবাদ এলাকার বাসিন্দা।
উরির এক বাসিন্দা বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে গোলাবর্ষণ শুরু হয়। আমরা বাংকারে আশ্রয় নিই। কিছু সময় পর তা আরও তীব্র হয়। ২০২১ সালে যুদ্ধবিরতি নবায়নের পর এটি সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি।’
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ ভূগর্ভস্থ বাংকারে অবস্থান নিয়েছেন। সীমান্ত থেকে কিছুটা দূরের এলাকাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কামালকোট, সালামাবাদ, দাচনা ও গিঙ্গাল গ্রামে পাকিস্তানের গোলা আঘাত হানে। অন্তত ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এতে ৩১ জন নিহত ও ৫৭ জন আহত হয়েছেন। অপরদিকে, পাকিস্তানি বাহিনীর পাল্টা হামলায় ভারতের দাবি অনুযায়ী ১৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৩ জন আহত হয়েছেন।
গত ২২ এপ্রিল ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকে ভারত–পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপড়েন বাড়ে। বর্তমানে তা পাল্টাপাল্টি হামলায় রূপ নিয়েছে।