বিএনপি পল্টি নিয়ে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করছে: জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের অভিযোগ করেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে আলোচনার পর সবাই একমত হয়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বিএনপি পরবর্তীতে অবস্থান পরিবর্তন করেছে।

তিনি বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে একমত হয়েই আমরা সবাই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছি। সব কিছু পর্যালোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, একটি সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ গ্রহণ করা হবে এবং এ নিয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোট শেষে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের সংসদের মাধ্যমে ২৭০ দিনের মধ্যে সনদটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে। সব পক্ষ রাজি ছিল, কিন্তু হঠাৎ বিএনপি পল্টি নিয়েছে। তারা এত দিন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অংশ ছিল, জুলাই সনদে স্বাক্ষরও করেছে, এখন আবার বলছে—আমরা এটাকে মানি না। বিএনপি বর্তমানে সরকারের ওপর অযৌক্তিক চাপ তৈরি করছে।”

শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার এলাকায় কুমিল্লা সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। পরে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াত আয়োজিত ভোটকেন্দ্র পরিচালক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তিনি।

তাহের আরও বলেন, “যদি বিএনপি সংস্কার না মানত, তাহলে প্রক্রিয়া শুরুর আগেই তা জানানো যেত। তখন হয়তো বিএনপি ছাড়াই জুলাই সনদ হতো বা নাও হতে পারত। কিন্তু এতগুলো রাজনৈতিক দলের সময় ব্যয় করে যখন সবাই এক জায়গায় পৌঁছেছে, তখন বিএনপির এই অবস্থান দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক। তারা পরিকল্পিতভাবে দেশে রাজনৈতিক সংকট তৈরি করতে চাইছে। ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন নিয়ে মানুষের মনে সংশয় তৈরি করার কৌশল নিয়েছে বিএনপি।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “জামায়াত বরাবরই বলেছে—গণভোটের মাধ্যমে জনগণের রায় নিয়েই সংস্কার হতে হবে, কারণ জনগণই ক্ষমতার উৎস। এখন বিএনপি বলছে, তারা গণভোট মানে, তবে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হতে হবে। অথচ গণভোট সংস্কারের জন্য এবং জাতীয় নির্বাচন সরকার গঠনের জন্য। তারা দুটি ভিন্ন প্রক্রিয়াকে একত্র করতে চাইছে—যেন তালের রস আর রামের রস একসাথে মেশানোর মতো অবস্থা তৈরি হচ্ছে। বিএনপি সব জায়গায় গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।”

তাহের বলেন, “নির্বাচন না হলে বিএনপির কোনো লাভ নেই। তারা কেন এমন করছে, বুঝে আসে না। নির্বাচন না হলে যারা দেশের বাইরে বসে ষড়যন্ত্র করছে, তারাই সুযোগ পাবে। বিএনপির আচরণে মনে হচ্ছে, তারা সংস্কারবিহীন সেই বাংলাদেশ ফিরিয়ে আনতে চায়, যা আওয়ামী লীগের সময়ে আমরা দেখেছি। বাংলাদেশকে আওয়ামী জাহেলিয়াতের দিকে ফিরিয়ে নিতে জনগণ কখনোই দেবে না।”

তিনি আরও যোগ করেন, “যদি সরকার চাপের কাছে নতি স্বীকার করে এবং সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে, তাহলে বোঝা যাবে—সরকার আর নিরপেক্ষ নেই। কোনো দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করলে সেই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না। এতে জনগণের আস্থা হারানোর আশঙ্কা তৈরি হবে। সরকার যদি কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করে, তাহলে তাদের প্রতি আস্থা রাখার আর কোনো সুযোগ থাকবে না।”

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের কুমিল্লা অঞ্চলের টিম সদস্য আবদুস সাত্তার, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির মোহাম্মদ শাহজাহান, কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মাহবুবর রহমান, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মজিবুর রহমান ভূঁইয়া এবং চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির সাহাব উদ্দিন প্রমুখ।