১৪ মাসে ৪০ বিচারবহির্ভূত হত্যা, সর্বাধিক ঘটেছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে

জুলাই অভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনকালে গত ১৪ মাসে দেশে ৪০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার সম্প্রতি প্রকাশিত তাদের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সংস্থাটি দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে তাদের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের পরিসংখ্যান সংযোজন করা হয়।

অধিকারের হিসাবে দেখা গেছে, অভ্যুত্থানের এক মাস পরের সেপ্টেম্বরেই বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে—৯টি। এরপর অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে একজন করে নিহত হন। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পাঁচজন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, মার্চ ও এপ্রিলে দুজন করে, মে, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে নিহতের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে চার, তিন, ছয়, তিন ও দুই।

মোট ৪০ জন নিহতের মধ্যে ১৯ জন গুলিতে, ১৪ জন নির্যাতনে ও সাতজন পিটুনিতে প্রাণ হারান।
গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ১১টি বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটে—যার মধ্যে তিনটির জন্য পুলিশ, একটি সেনাসদস্য এবং সাতটির জন্য যৌথ বাহিনীকে দায়ী করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালের ৯ আগস্ট থেকে এই হিসাব শুরু করেছে অধিকার। তার চার দিন আগেই ছাত্র–জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। তাদের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনকালে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে দেশি-বিদেশি সংগঠনগুলোর সমালোচনা ছিল প্রবল।

অভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধিকারের প্রতিষ্ঠাতা আদিলুর রহমান খান। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, পরবর্তীতে হাইকোর্ট তাঁকে খালাস দেন।

অধিকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় মব সন্ত্রাসে নিহত হয়েছেন ১৫৩ জন। সবচেয়ে বেশি এমন ঘটনা ঘটে গত সেপ্টেম্বর মাসে, ১৮টি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই সংখ্যা ছিল ১৭টি। সর্বশেষ তিন মাসে ৪৫টি মব সন্ত্রাসের ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছে সংস্থাটি।

রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাও ছিল ব্যাপক। অধিকার জানিয়েছে, গত ১৪ মাসে ৭ হাজার ৯৭৯টি রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৪৪টি সংঘটিত হয়েছে এ বছরের মার্চে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৮৬২টি, আগস্টে (৯–৩১ আগস্ট) ৫০০টি, এ বছরের এপ্রিলে ৭৯৮টি, জুনে ৪৮৯টি, জুলাইয়ে ৫৭৯টি, আগস্টে ৬৫৮টি এবং সেপ্টেম্বরে ৩০০টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়।

এই সময় রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন মোট ২৮১ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৪ জন নিহত হন চলতি বছরের মার্চে, আর গত বছরের আগস্টে (৯–৩১ আগস্ট) নিহত হন ৩৩ জন।

একই সময়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাও নথিভুক্ত করেছে অধিকার। মোট ২৪২ জন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে—এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে ৩৪টি, মার্চে ৩০টি, মে মাসে ২৮টি, আগস্টে ২৬টি এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।