“সমন্বিত পরিকল্পনা ছাড়া অর্থনীতি বিপর্যস্ত হতে পারে,” সতর্কবার্তা মুহাম্মদ ইউনূসের
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় রোববার এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “বর্তমান যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। দ্রুত এটি শৃঙ্খলার মধ্যে না আনতে পারলে পুরো ব্যবস্থাই অর্থনীতির জন্য গলার ফাঁসে পরিণত হবে।”
সভায় আলোচিত হয় ‘সেন্ট্রাল ইন্টিগ্রেটেড মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট সেক্টর মাস্টার প্ল্যান অব বাংলাদেশ’—যা পরিবহন খাতের দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনা হিসেবে বিবেচিত। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় তিনি সড়ক, রেল, বিমান ও নৌপথ—এই চারটি খাতকে টেকসই ও সমন্বিতভাবে উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, “এই উন্নয়ন অবশ্যই হতে হবে পরিবেশবান্ধব উপায়ে। নদী বা প্রকৃতির কোনো ক্ষতি করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, পানি আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ; তাই নদীর শান্তি ও ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।”
সভায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ দেশের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি প্রাথমিক কৌশলগত পরিকল্পনা উপস্থাপন করে। এতে বলা হয়, বিদ্যমান রেল, নৌ ও সড়ক নেটওয়ার্কের সঠিক ব্যবহার ও সীমিত উন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি সম্ভব।
প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “এই পরিকল্পনা আমাদের একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে। এখন এটিকে বাস্তবে রূপ দিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সংযোগকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
তার ভাষায়, “যখন আমরা নদীকে পরিবহন মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করব, তখন অবশ্যই মনে রাখতে হবে—নদীই আমাদের প্রাণ।”
সভায় আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মঈনউদ্দিন বলেন, যোগাযোগ খাতে একটি সামষ্টিক মডেল গড়ে তোলার কাজ চলছে, যা দেশের অর্থনৈতিক লাইফলাইন তৈরি করবে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “যেসব এলাকায় ছোট কিছু সড়ক নির্মাণ করলেই বৃহত্তর সংযোগ সম্ভব, সেসব ক্ষেত্রে দ্রুত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।”
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি ‘প্ল্যানার্স উইং’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে কাজগুলো আরও পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন করা যায়।
বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, “২০৩০ সালের মধ্যে চট্টগ্রামে তিনটি নতুন বন্দর চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এই বন্দরের সঙ্গে কার্যকর সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করতে এখন থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে।”
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু, রেল, বেসামরিক বিমান, নৌপরিবহন এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ–তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা।
