জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও গণভোট আয়োজন নিয়ে উদ্ভূত মতপার্থক্য নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে ধর্মভিত্তিক আট দল। আলোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘রেফারির’ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
সোমবার বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আট দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান তাহের। তিনি বলেন, “আমরা যে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলাম, সেখানে হঠাৎ একটি দল বিরোধিতা করছে। আমরা আশা করি, তারা দ্রুত তাদের অবস্থান পরিষ্কার করবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে গণভোট আগে বা পরে করেও লাভ নেই। বরং গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন করাই যুক্তিযুক্ত, কারণ নির্বাচনের দিন ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটে জনগণের মনোযোগ থাকবে না।”
জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, “আমি গতকাল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিলাম। আজ উপদেষ্টা পরিষদও একই আহ্বান জানিয়েছে। আমরা চাই প্রধান দলগুলো যেন এই উদ্যোগে সাড়া দেয়। যদি সবাই ইতিবাচকভাবে সাড়া দেয়, তাহলে সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে।”
তিনি মনে করেন, “উপদেষ্টা পরিষদ যদি মনে করে তাদের আর কিছু করার নেই, তাহলে আলোচনায় একটি ‘রেফারির’ অভাব থেকে যাবে। প্রধান উপদেষ্টা আগের মতো এখানেও রেফারির ভূমিকা পালন করবেন, সেই প্রত্যাশা করছি।”
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের গণভোট আগামী সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একসঙ্গে হবে নাকি আগে হবে—এ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতসহ কয়েকটি দলের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
এর আগে সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, পরিষদ গণভোটের সময়সূচি, বিষয়বস্তু ও জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্ন মতগুলোর সমাধান বিষয়ে দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারের জন্য ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।”
তবে এই ‘ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা’ বাস্তবায়নে সরকার নতুন কোনো সংলাপ আয়োজন করবে কি না, সে বিষয়ে পরিষদের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
আট দলের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেন, “ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। তবে জুলাই সনদ নিয়ে দেশের মানুষ যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্ন দেখেছিল, তা এখনো বাস্তব হয়নি।”
তিনি জানান, আট দলের যৌথ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তাদের মূল দাবি—জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করা, অবিলম্বে সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করা, এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে পৃথকভাবে গণভোট আয়োজন করা।
তিনি বলেন, “আরপিও সংশোধন করা হলে আমরা তা মেনে নেব না। আগের অবস্থায় রাখতে হবে।”
মামুনুল হক আরও জানান, এসব দাবিতে আগামী ৬ নভেম্বর সকাল ১১টায় গণমিছিল করে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। “আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমত্যে পৌঁছালে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারবে,” বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (চরমোনাই পীর), ইউনুছ আহমাদ, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, নেজামে ইসলাম পার্টির মুফতি হারুন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের এবং জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধান উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কার্যালয়ে আট দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে মিলিত হন। এই আট দল হলো—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও ডেভেলপমেন্ট পার্টি।
