বিএনপির প্রাথমিক তালিকায় ২৩৭ প্রার্থী, শরিকদের জন্য ৬৩ আসন খালি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি প্রাথমিকভাবে ২৩৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া শরিক দলগুলোর জন্য ৬৩টি আসন খালি রাখা হয়েছে, যেখানে এখনও ধানের শীষের প্রার্থী দেওয়া হয়নি।

সোমবার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থীদের নাম পড়ে শোনান। তিনি বলেন, “যেসব আসনে আমাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা আগ্রহ দেখিয়েছেন, সেসব আসনে আমরা এখনো প্রার্থী দিইনি। তারা নিজেদের তালিকা ঘোষণা করলে আমরা চূড়ান্ত প্রার্থিতা ঠিক করব।”

মির্জা ফখরুল আরও জানান, এটি কেবল সম্ভাব্য তালিকা, প্রয়োজনে পরিবর্তন আসতে পারে। শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর কোনো কোনো আসনে সমন্বয় করা হবে বলেও জানান তিনি।

২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি শরিক দলগুলোর জন্য ২২টি আসন ছেড়েছিল। ওই নির্বাচনে গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জেএসডি, এলডিপি, খেলাফত মজলিশ ও কল্যাণ পার্টি প্রার্থিতা পেয়েছিল বিএনপির জোট থেকে।

তখনকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকাকালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে ছিলেন। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নামে জোট গঠন করে বিএনপি ভোটে অংশ নেয়। বিতর্কিত সেই নির্বাচনে বিএনপি পায় পাঁচটি আসন, আর ঐক্যফ্রন্টের মোট আসন ছিল সাতটি।

পরে ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো অংশ না নিয়ে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। এর আগে বিএনপি তাদের পুরনো ২০ দলীয় জোট ভেঙে যুগপৎ আন্দোলনের পথে হাঁটে।

যদিও সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসে, কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

এরপর দেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা আরও প্রবল হয়ে ওঠে। বিএনপির সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়লেও জামায়াত এখন ধর্মভিত্তিক আটটি দল নিয়ে পৃথক আন্দোলন চালাচ্ছে। বিএনপির পুরনো শরিকদের মধ্যে কারা এবার নির্বাচনে অংশ নেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

২০১৮ সালের নির্বাচনে শরিকদের জন্য বিএনপির ছাড় দেওয়া আসনগুলোর তালিকাও ছিল বৈচিত্র্যময়।
গণফোরামের পক্ষ থেকে কুড়িগ্রাম-২ এ আমসা আমিন, পাবনা-১ এ অধ্যাপক আবু সাইদ, ময়মনসিংহ-৮ এ এইচ এম খালেকুজ্জামান, ঢাকা-৬ এ সুব্রত চৌধুরী, ঢাকা-৭ এ মোস্তফা মহসীন মন্টু, মৌলভীবাজার-২ এ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এবং হবিগঞ্জ-১ এ রেজা কিবরিয়া মনোনয়ন পান।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থীরা ছিলেন নাটোর-১ এ মনজুরুল ইসলাম, টাঙ্গাইল-৪ এ লিয়াকত আলী, টাঙ্গাইল-৮ এ কুড়ি সিদ্দিকী এবং গাজীপুর-৩ এ ইকবাল সিদ্দিকী।

জেএসডির জন্য কিশোরগঞ্জ-৩ এ মো. সাইফুল ইসলাম, ঢাকা-১৮ এ শহীদ উদ্দিন মাহমুদ, কুমিল্লা-৪ এ আবদুল মালেক রতন এবং লক্ষ্মীপুর-৪ এ আ স ম আবদুর রবকে আসন ছেড়ে দেওয়া হয়।

এলডিপির মধ্যে ময়মনসিংহ-১০ এ সৈয়দ মাহমুদ মোরশেদ, কুমিল্লা-৭ এ রেদওয়ান আহমেদ, লক্ষ্মীপুর-১ এ শাহাদাত হোসেন সেলিম ও চট্টগ্রাম-৭ এ নূরুল আলম প্রার্থী হন।

এছাড়া খেলাফত মজলিশের পক্ষ থেকে হবিগঞ্জ-২ এ আব্দুল বাসিত আজাদ, হবিগঞ্জ-৪ এ আহমদ আবদুল কাদের এবং কল্যাণ পার্টির জন্য চট্টগ্রাম-৫ এ সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।