মুন্সীগঞ্জে লঞ্চে দুই তরুণীকে পেটানোর ঘটনায় মামলা

মুন্সীগঞ্জে একটি লঞ্চে কোমরের বেল্ট দিয়ে দুই তরুণীকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। শনিবার গভীর রাতে সদর উপজেলার মুক্তারপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মিলন বাদী হয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় মারধরকারী যুবক নেহাল আহাম্মেদ ওরফে জিহাদের (২৫) নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি এম সাইফুল আলম। নেহাল আহাম্মেদ জিহাদ মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার যোগনি ঘাট এলাকার মনির হোসেনের ছেলে।

মামলার বিবরণে বলা হয়, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চ ঘাটে ‘এম ভি ক্যাপ্টেন’ লঞ্চে নারী যাত্রীদের মারধর করা হয় এবং এতে তারা জখম হন। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও তা প্রকাশিত হয়। পরে পুলিশ শনিবার দুপুরে অভিযুক্ত জিহাদকে গ্রেপ্তার করে।

ওসি সাইফুল আলম জানান, নৌ-পথে এ ঘটনা ঘটায় মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে মুক্তারপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির এসআই ইমরান আহমেদকে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, এক তরুণীকে লঞ্চের সামনে নিয়ে কোমরের বেল্ট দিয়ে এক যুবক বেপরোয়াভাবে পেটাচ্ছেন। আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় ৫০-৬০ জন পুরুষ এই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করছিল এবং নানা স্লোগান দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করছিল। ভিডিওতে একটি সাদা পোশাক পরা আনুমানিক ১৫-১৭ বছর বয়সী তরুণী ও অপর একটি চেক জামা পরা তরুণীকে মারধরের দৃশ্য দেখা গেছে।

ঘটনার বিবরণে বলা হয়, ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে কয়েকজন চাঁদপুরের মোহনপুরে বেড়াতে যাওয়ার জন্য একটি লঞ্চ ভাড়া করে। ফেরার পথে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চ ঘাটে কিছু কেনাকাটার সময় স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর স্থানীয়রা লঞ্চে উঠে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও শ্লীলতাহানি করে। এ সময় নেহাল আহাম্মেদ জিহাদ দুই তরুণীকে ডেকে নিয়ে প্রকাশ্যে বেল্ট দিয়ে মারধর করেন।

এই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগে যৌন নিপীড়ন, বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে অনধিকার প্রবেশ, মারধর, ভাঙচুর, ক্ষতি ও হুমকির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইমরান আহমেদ জানান, মামলার পর জিহাদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং রোববার বেলা দেড়টার দিকে মুন্সীগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলামের আদালতে হাজির করে তার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। বিচারক রিমান্ড শুনানির জন্য সোমবার দিন ধার্য করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

পুলিশ জানায়, ভিডিও বিশ্লেষণের মাধ্যমে অন্য আসামিদের শনাক্ত করা হচ্ছে। ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং যাদের কাছে ভিডিও রয়েছে তাদের সহযোগিতায় প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত ও ঘটনার সঠিক বিশ্লেষণ করা হবে।

মুক্তারপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ওসি আতাউর রহমান বলেন, “স্পর্শকাতর এ ঘটনায় কিছু ব্যক্তির কারণে পুরো এলাকার ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র আদালতের সামনে উপস্থাপন জরুরি। নানা চাপের মধ্যেও পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।”