সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যৌথভাবে ইসলামি ধারাসহ যেকোনো তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নিতে পারবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এক বা একাধিক শেয়ার হস্তান্তর আদেশ জারি করতে পারবে। শেয়ার হস্তান্তর গ্রহীতাকে অবশ্যই সরকারি মালিকানাধীন কোনো কোম্পানি হতে হবে। এমন ধারা যুক্ত করে ছুটির দিন শুক্রবার ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’–এর ৬৭ পৃষ্ঠার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল অধ্যাদেশটির খসড়া অনুমোদন করেছিল উপদেষ্টা পরিষদ।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের সুবিধাভোগী মালিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিল নিজেদের স্বার্থে অথবা প্রতারণামূলকভাবে অন্যের স্বার্থে ব্যবহার করলে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংককে রেজল্যুশন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। রেজল্যুশনের অর্থ, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা।
সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে দুর্বল যেকোনো ব্যাংকে অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি বিদ্যমান বা নতুন শেয়ারধারীদের মাধ্যমে মূলধন বাড়াতে পারবে। ব্যাংকের শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তরের সুযোগও থাকছে।
এছাড়া বলা হয়েছে, যদি বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, কোনো ব্যাংক কার্যকর নয় বা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা নেই, দেউলিয়া হয়ে গেছে বা সেই পথে রয়েছে, আমানতকারীদের পাওনা দিতে পারছে না বা না দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে—তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই ব্যাংকের মঙ্গলার্থে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আলাদা বিভাগ গঠন করবে।
ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ও কার্যকর পরিচালনা অব্যাহত রাখতে এক বা একাধিক ব্রিজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সুযোগ রাখা হয়েছে, যা পরে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রিও করা যাবে। দুর্বল বা দেউলিয়া হওয়া ব্যাংকের কার্যক্রম সাময়িকভাবে পরিচালনার জন্য গঠিত ব্যাংককে বলা হবে ব্রিজ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে দুর্বল ব্যাংকের সব ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করতে পারবে।
এদিকে, ব্যাংক খাত সংকট ব্যবস্থাপনায় সাত সদস্যের আন্তপ্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা ‘ব্যাংক খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল’ গঠনের কথা বলা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ ছয় সদস্যের সংস্থা গঠনের কথা বললেও পরে এক সদস্য বাড়ানো হয়েছে। এই কাউন্সিল সংকট ব্যবস্থাপনা কৌশল ও আপৎকালীন বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করবে।
এই কাউন্সিলের প্রধান হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। আরও থাকবেন অর্থসচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক সচিব, রেজল্যুশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি গভর্নর এবং গভর্নরের মনোনীত আরেকজন ডেপুটি গভর্নর। প্রতি তিন মাসে একবার এই কাউন্সিল বৈঠক করবে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল হলে বাংলাদেশ ব্যাংক অবসায়নের জন্য আদালতে আবেদন করবে। আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোনীত কাউকে অবসায়ক হিসেবে নিয়োগ দেবে। অবসায়ন আদেশ কার্যকর হলে ব্যাংকের দায়ের ওপর কোনো সুদ বা মাশুল কার্যকর হবে না।
আবার কোনো ব্যাংক নিজেও অবসায়নের প্রক্রিয়ায় যেতে পারবে, তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে না। লাইসেন্স প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে আমানত এবং দুই মাসের মধ্যে অন্যান্য দায় পরিশোধ করতে হবে।
অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, যেসব ব্যক্তির কর্ম, নিষ্ক্রিয়তা বা সিদ্ধান্তের কারণে কোনো ব্যাংক ব্যর্থ হয় এবং ক্ষতি হয়, তাঁদের ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করা হবে। এ ছাড়া অধ্যাদেশের আওতায় বিধান অমান্যকারীদের ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং প্রতিদিন বিলম্বে অতিরিক্ত পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হবে।