রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় দুই বোনকে হত্যার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজে দেখা তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার তরুণ নিহতদের ছোট বোনের ছেলে গোলাম রব্বানী ওরফে তাজ (১৮)।
রোববার গভীর রাতে ঝালকাঠির সদর উপজেলার আছিয়ার গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
আজ সোমবার দুপুরে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, বিকেল ৪টায় মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলন হবে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত শুক্রবার বিকেলে বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গোলাম রব্বানী পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বাড়ির দোতলায় ওঠেন। তিনি নিহত মরিয়ম বেগম ও সুফিয়া বেগমের ছোট বোনের ছেলে।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার ৬৪৯ পশ্চিম শেওড়াপাড়ার একটি ফ্ল্যাটে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সাবেক কর্মকর্তা মরিয়ম বেগম (৬০) ও তাঁর ছোট বোন সুফিয়া বেগম (৫২) ছুরিকাঘাত ও শিলনোড়ার আঘাতে নিহত হন। রাত ১১টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, রব্বানী মা–বাবার সঙ্গে রাজধানীর শনির আখড়ায় থাকেন। তিনি ঘটনার দিন টাকার জন্য খালাদের বাসায় যান। টাকা না পেয়ে খালাদের ছুরি ও শিলনোড়া দিয়ে হত্যা করেন এবং পরে গ্রামে আত্মগোপন করেন।
পুলিশ আরও জানায়, রব্বানী মোবাইল ফোনে আসক্ত ছিলেন এবং উগ্র আচরণের কারণে স্কুল থেকেও বহিষ্কার হয়েছিলেন।
ঘটনার পরদিন মরিয়ম বেগমের স্বামী বন বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা কাজী আলাউদ্দিন মিরপুর থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
আজ যোগাযোগ করা হলে কাজী আলাউদ্দিন জানান, পুলিশ তাঁকে রব্বানীর গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে।
মরিয়মের মেয়ে ইসরাত জাহান জানান, তাঁর মা ছোটবেলা থেকে রব্বানীকে আদর করতেন। অথচ সেই রব্বানীই মা ও খালাকে হত্যা করেছে। তিনি তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে নীল প্যান্ট, গাঢ় নীল শার্ট, মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক ও মাথায় কমলা টুপি পরা এক ব্যক্তি বাড়ির দোতলায় ওঠেন এবং কাপড় পাল্টে দেড় ঘণ্টা পর বেরিয়ে যান।
বাসায় তখন মরিয়ম, তাঁর স্বামী কাজী আলাউদ্দিন, মেয়ে নুসরাত জাহান ও ছোট বোন সুফিয়া ছিলেন। ঘটনার সময় কাজী ছিলেন বরিশালে এবং নুসরাত অফিসে।
নুসরাত জানান, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে বাসায় ফিরে কলিংবেল বাজান, ভেতর থেকে সাড়া না পেয়ে বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খুলে ঢোকেন। তিনি মাকে ডাইনিং রুমে ও খালাকে শোবার ঘরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
তিনি বলেন, মায়ের মাথা ও পেটে একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল, আর খালার মাথা শিলনোড়ার আঘাতে থেঁতলানো। পাশে ছিল রক্তমাখা ছুরি ও শিলনোড়া। খাবারের টেবিলে শরবতের মগ ও তিনটি গ্লাস ছিল।
নুসরাত জানান, তাঁরা ২০ বছর ধরে ওই ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। মা অপরিচিত কাউকে বাসায় ঢুকতে দিতেন না। ভবনের নিরাপত্তাকর্মী প্রায় সময়ই ফটকে থাকতেন না। ফলে প্রধান ফটক খোলা থাকলে যে কেউ ভিতরে ঢুকে যেতে পারত।
মরিয়ম ও সুফিয়ার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে হিমঘরে রাখা হয়েছে। তাঁদের বরিশালের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে।