রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর শুনানি বুধবার অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়।
জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন এহসান আব্দুল্লাহ সিদ্দিক এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে শুনানি করেন তৌহিদুল ইসলাম।
শুনানি শেষে জামায়াতের কৌঁসুলি শিশির মনির জানান, “যে প্রক্রিয়ায় হাই কোর্ট নিবন্ধন বাতিল করেছে সেটি মূলত ইসির সামনে বিচারাধীন ছিল। ইসির কাছে বিবেচনাধীন কোনো বিষয় আদালত বাতিল করতে পারে না। এটি ছিল প্রিম্যাচিউর।”
তিনি আরও বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর প্রতীক দাঁড়িপাল্লা শুরু থেকেই ছিল এবং সংসদীয় নির্বাচনে দলটি এ প্রতীক ব্যবহার করেছিল। কিন্তু হঠাৎ ফুলকোর্ট সভার এক সিদ্ধান্তের কারণে এটি ব্যবহার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়।”
শিশির মনির দাবি করেন, “ভারতীয় উপমহাদেশে আদালতের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলের কোনো নজির নেই, এটিই প্রথম।”
ইসির আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “জামায়াতের নিবন্ধন আবেদন যাচাই-বাছাই করেছিলাম, কিন্তু হাই কোর্টের হস্তক্ষেপে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। আপিল বিভাগের রায়ের অপেক্ষায় আছি, যেটি বাস্তবায়ন করবো।”
তিনি বলেন, “২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত হয় দাঁড়িপাল্লা প্রতীকটি সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হবে, এবং এটি অন্য কাউকে বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। সেই সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনকে জানানো হলে প্রতীকটি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।”
তৌহিদুল আরও বলেন, “ফুলকোর্টের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আপিল বিভাগ জানিয়েছে, এই মামলায় তারা সেই সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করবে না।”
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন তরীকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ ও সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন।
২০১৩ সালের ১ আগস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের বেঞ্চ রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের করা স্থগিতাদেশ আবেদন ৫ আগস্ট আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত খারিজ করে দেয়।
হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে। ফলে দলটির দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
পরে জামায়াত পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। তবে ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর শুনানিতে তাদের মূল আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সেই আপিল খারিজ করে দেয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে জামায়াত আপিল পুনরুজ্জীবনের আবেদন জানায়।
২০২৩ সালের ২৪ আগস্ট সর্বোচ্চ আদালত সে আবেদন মঞ্জুর করে, ফলে নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার আইনি লড়াইয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
জামায়াতের কৌঁসুলি শিশির মনিরের আবেদনের ভিত্তিতে ৭ মে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ মঙ্গলবার শুনানির দিন ধার্য করে।
শিশির মনির বলেন, “নিবন্ধন বাতিলের কারণে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।”
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দলের আবেদনে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
নিবন্ধন ফিরে পেলে ২০০১-০৬ মেয়াদে বিএনপির সঙ্গে সরকারে থাকা দলটি আবার নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার পাবে।