স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যে ভারতের নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতির শঙ্কা

ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসহ সাত ধরনের পণ্যের স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি বন্ধ হওয়ায় ভারতের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভারতের দিকে পাল্লা ভারী থাকার বাস্তবতা তুলে ধরে বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করবে। তিনি বলেন, “আমরা নিশ্চয়ই এই অবস্থানগুলো তুলে ধরবো এবং সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবো।”

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এই পদক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভৌগলিকভাবে সংযুক্ত দুটি দেশ আমরা। এটা বাণিজ্য ব্যবস্থাপনার একটা প্রক্রিয়া। উভয়পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে এর উপযুক্ত সিদ্ধান্ত আনতে পারবো। আমাদের আরও কিছু বন্দর এখনও খোলা আছে।”

শনিবার ভারত স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসহ সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) নিষেধাজ্ঞার আদেশে বলা হয়, কোনো স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে কোনো ধরনের পোশাক ভারতে ঢুকতে পারবে না।

এখন থেকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কেবল কলকাতা ও মুম্বাইয়ের নভসেবা (জওহরলাল নেহরু) সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে।

ফল, ফলের-স্বাদযুক্ত পানীয় ও কার্বোনেটেড ড্রিংকস; বেকারি, চিপস, স্ল্যাকস এবং কনফেকশনারিতে তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাবার; তুলা ও সুতার ঝুট; পিভিসিসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্য এবং কাঠের তৈরি আসবাবপত্রও এই বিধিনিষেধের আওতায় পড়েছে।

আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের কোনও ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন বা আইসিপি দিয়ে এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন দিয়েও এসব পণ্য ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এক মাসের মাথায় ভারতের এই পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এলো, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর যে চড়া শুল্ক আরোপ করেছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারত তার চেয়েও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। স্থানীয় স্থলবন্দরে, বিশেষ করে আখাউড়া ও ডাউকি সীমান্তভিত্তিক কিছু সিদ্ধান্তের কথা শুনেছি। আনুষ্ঠানিকভাবে জানার পর সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। এখন বিষয়টি বিশ্লেষণ করবো।”

২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১৬ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকার পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে, আর ভারত থেকে এসেছে ৯৪ হাজার কোটি টাকার পণ্য। পরের বছর রপ্তানি হয় ১৭ হাজার কোটি টাকার পণ্য, আর আমদানি হয় ৯৯ হাজার কোটি টাকার পণ্য। ঘাটতি দাঁড়ায় ৮২ হাজার কোটি টাকা।

স্থলবাণিজ্যে ভারতের নতুন বিধিনিষেধের প্রায় এক মাস আগে বাংলাদেশ বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয়।

গত ৯ এপ্রিল ভারত বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে রপ্তানি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধাও বাতিল করে। এখন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করল প্রতিবেশী দেশটি।

তবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যকে স্বাভাবিক বাণিজ্য প্রবাহ হিসেবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “তারা যেটা আমাদের থেকে নেয়, সেটা সুলভ মূল্যের কারণেই নেয়। আমরাও একই কারণে তাদের পণ্য কিনি। সুতরাং এখানে স্বাভাবিক বাণিজ্য প্রবাহের বিষয়গুলো তুলে ধরবো।

“আমরা বৈচিত্র্য ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়িয়ে বাণিজ্য বৃদ্ধি করবো।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি আসবাব যায় না। পোশাকপণ্য যায়, আমরা প্রতিযোগিতা সক্ষমতার মাধ্যমেই পাঠিয়ে থাকি। দুপক্ষের জন্যই লাভজনক বিধায় এগুলো যায়। আশা করি, উভয় দেশের ভোক্তা ও উৎপাদনের স্বার্থে এটি চলমান থাকবে।”

ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধের প্রভাব জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “ট্রান্সশিপমেন্টের কোনো প্রভাব আমাদের ওপর নেই। নিজস্ব সক্ষমতা ব্যবহার করেই সমস্যা সমাধান করেছি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *