নগদের বর্তমান ব্যবস্থাপনা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর

মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা প্রদানকারী কোম্পানি নগদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদে থাকার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর এর বর্তমান ব্যবস্থাপনাও প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

সোমবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, “আমরা মনে করি তাদের (বর্তমান ব্যবস্থাপনা) হাতে নগদের কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত নয়। কোর্টের একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা সেটার জন্য আপিল করেছি। এ বিষয়ে খুব দ্রুত শুনানি হবে। আমরা মনে করি, রায় আমাদের পক্ষে পাব।”

এর আগে রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় নগদের সিইও সাফায়েত আলমের পদে থাকার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন গভর্নর। তিনি বলেন, “অবশ্যই উনি জালিয়াতি করেছেন। অবশ্যই উনি দোষী এবং ওনার এই পদ পাওয়ার কোনো অধিকার নেই। উনি দায়িত্ব নিতে পারেন না।”

সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, “আমরা শংকিত, কারণ এ সময়ের মধ্যে তারা সিস্টেমের ওপর পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। তারা অনেক কিছু করে ফেলতে পারে, যেটার ওপর আমাদের কোনো হাত থাকবে না। তারা তাদের যে অপকর্মগুলো করেছে, তা মুছে ফেলার চেষ্টা করবে। ডেটাগুলোকে মুছে দেবে, যা পরবর্তীতে আমাদের কাজকে আরও কঠিন করে তুলবে।”

নগদের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান ‘একেবারে স্পষ্ট’ বলে মন্তব্য করেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বলেন, নগদের আগের ম্যানেজমেন্ট ও বোর্ডে যারা ছিলেন, তারা নানা উপায়ে দুর্নীতি ও টাকা আত্মসাৎ করেছেন; ৬৫০ কোটি টাকার ই-মানি তৈরি করেছে এবং সরকারের দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচির অধীনে অর্থ স্থানান্তরের ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছে— এসব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

বর্তমান ব্যবস্থাপনা নতুন করে বড় কোনো ক্ষতি করতে পারবে না বলে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যেন তারা বড় ধরনের লেনদেন করতে না পারে, শুধু ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউট করতে পারবে।

২০২৪ সালের ২১ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নগদের আগের পর্ষদ ভেঙে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক বদিউজ্জামানকে প্রশাসক করা হয়।

তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযান ও বদিউজ্জামানের ওপর হামলার পর তাকে সরিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের পরিচালক মো. মোতাছিম বিল্লাহকে নতুন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এরপর উচ্চ আদালতে প্রশাসক বসানো নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নামে নগদ।

গত সপ্তাহে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নগদ জানায়, “আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত নগদে প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে। এর ধারাবাহিকতায় গত সোমবার সিইও হিসেবে যোগ দেন সাফায়েত আলম।”

২০১৯ সালের ২৬ মার্চ মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে নগদ। পরবর্তীতে কোম্পানিটিকে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *