বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার এক দিনের মাথায় জামিনে মুক্তি পেলেন ঢাকাই সিনেমার নায়িকা নুসরাত ফারিয়া।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান তার জামিন মঞ্জুর করেন বলে জানান আইনজীবী মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন। তিনি বলেন, “আমরা নুসরাত ফারিয়ার জামিন চেয়ে স্পেশাল পুটআপ জমা দিয়েছিলাম। আদালত শুনানি শেষে তাকে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এখন জামিননামা দাখিল করব। প্রত্যাশা করছি, তিনি আজই কারামুক্ত হতে পারবেন।”
‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমার এই অভিনেত্রীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার করার পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়, যার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারাও বক্তব্য দেন।
ঘটনার সময় ‘দেশে ছিলেন না’ ফারিয়া
রোববার সকালে থাইল্যান্ডে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন পুলিশ নুসরাত ফারিয়াকে আটক করে। পরে তাকে ভাটারা থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এনামুল হক নামে এক ব্যক্তি গত মার্চে ফারিয়াসহ ২৮৩ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে ভাটারা থানা ২৯ এপ্রিল মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১৯ জুলাই ভাটারা থানার সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গুলিতে এনামুল হকের পায়ে আঘাত লাগে এবং তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বিল্লাল ভূঁইয়া সোমবার সকালে ফারিয়াকে আদালতে হাজির করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। অপরদিকে, ফারিয়ার আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন।
আইনজীবী ফারহান মোহাম্মদ আরাভ শুনানিতে বলেন, ঘটনার সময় নুসরাত ফারিয়া দেশে ছিলেন না। তিনি ৯ জুলাই শুটিংয়ের জন্য কানাডা যান এবং ১৪ আগস্ট দেশে ফেরেন। সেই প্রমাণ আদালতে দাখিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “তিনি আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন। তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি আওয়ামী লীগের সাথেও সম্পৃক্ত নন।”
আরেক আইনজীবী মোর্শেদ আলম শাহিন বলেন, “তাকে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে মামলায় জড়ানো হয়েছে। তিনি শারীরিকভাবেও অসুস্থ। তাই আমরা যেকোনো শর্তে জামিন চাচ্ছি।”
রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, “তিনি এজাহারভুক্ত আসামি। থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিস্টরা দেশের নায়ক, নায়িকা, ফুটবলারদের পিক আপ করে দলে নেয়। তিনি (ফারিয়া) তাদের প্রভাবিত হয়ে গিয়েছেন।”
আদালত শুনানি শেষে বলেন, ঘটনার সময় ফারিয়া দেশের বাইরে ছিলেন কিনা এবং তিনি আন্দোলনের পক্ষে পোস্ট দিয়েছেন কিনা, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে হবে।
প্রতিবেদন পাওয়ার পর ২২ মে জামিনের বিষয়ে শুনানি হবে বলে জানিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। তবে আইনজীবীদের বিশেষ আবেদনের ভিত্তিতে মঙ্গলবারই জামিন মঞ্জুর করেন তিনি।
আলোচনা-সমালোচনা
‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেন নুসরাত ফারিয়া। ভারতীয় নির্মাতা শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় যৌথভাবে নির্মিত এ সিনেমাটি ২০২৩ সালে মুক্তি পায়।
ফারিয়া অভিনয়জীবন শুরু করেন রেডিও জকি ও উপস্থাপক হিসেবে। ২০১৫ সালে ‘আশিকী’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয় তার। এরপর তিনি ‘হিরো ৪২০’, ‘বাদশা-দ্য ডন’, ‘বস-টু’, ‘ধ্যাততেরিকি’সহ একাধিক সিনেমায় অভিনয় করেন।
গানেও সরব ফারিয়া। ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর ‘হাবিবি’, ‘আমি চাই থাকতে’সহ আরও কিছু গান প্রকাশ করেন তিনি।
তার গ্রেপ্তারের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনার জন্ম হয়। অনেকে দাবি করেন, সিনেমায় শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয়ের কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান এক ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “নুসরাত ফারিয়াদের গ্রেপ্তার করে মূলত গণহত্যার বিচারকে হালকা করা হচ্ছে। নুসরাত ফারিয়া গ্রেপ্তার হলে তিশারাও গ্রেপ্তার হবে।”
উল্লেখ্য, তিশাও একই সিনেমায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর স্ত্রী, যিনি বর্তমানে সংস্কৃতি উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন।
ফারুকীও ফারিয়ার গ্রেপ্তার নিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ ইস্যু থেকে সৃষ্ট স্নায়ুচাপে ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকতে পারে।
তিনি বলেন, “এইসব ঘটনা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না। আমি বিশ্বাস করি, ফারিয়া আইনি প্রতিকার পাবে।”
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “উনার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়নি। এই অবস্থায় আবার ছেড়ে দিলে আপনারাই বলবেন কেন ছেড়ে দিলাম?”
