দীর্ঘ এক দশকের সাফল্যে রাঙানো ক্যারিয়ারে, মাঝমাঠের বিশ্বস্ত সেনানী কেভিন ডে ব্রুইনে ম্যানচেস্টার সিটির জার্সিতে ঘরের মাঠে শেষবারের মতো খেলতে নামলেন। তাকে বিদায় জানাতে ভক্তরা জড়ো হন গ্যালারিতে, কারও গায়ে তার জার্সি, কারও হাতে ‘কিং কেভ’ লেখা বিশাল ব্যানার। ম্যাচে এক সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে সেই বিশেষ মুহূর্তকে আরও রঙিন করে তুলতে পারেননি বেলজিয়ান তারকা। তবে দলের দুর্দান্ত জয় তার এই বিদায় ক্ষণকে আনন্দঘনই করে তুলেছে।
মঙ্গলবার রাতে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে বোর্নমাউথকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি।
ম্যাচের শেষ দিকে দুই দলই ১০ জনের দলে পরিণত হয়। শুরুতে দলকে এগিয়ে নেন ওমার মার্মুশ। এরপর প্রথমার্ধেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন বের্নার্দো সিলভা। ম্যাচের শেষ দিকে তৃতীয় গোলটি করেন নিকো গনসালেস।
এই জয়ে লিগ টেবিলে এক লাফে তিন ধাপ এগিয়ে গেছে সিটি। ফলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার সম্ভাবনাও জোরালো হয়েছে দলটির।
প্রিমিয়ার লিগে চলতি মৌসুমে সিটিকে প্রথম হারিয়েছিল এই বোর্নমাউথ। গত নভেম্বরে তারা ২-১ গোলে জিতেছিল সেই ম্যাচে। সেই ধাক্কায় পরবর্তী তিন ম্যাচেও হারে গুয়ার্দিওলার দল। এরপর বেশ কিছু সময় শিরোপা লড়াই থেকে ছিটকে পড়েছিল তারা। এবার সেই পুরোনো ক্ষতেই প্রলেপ দিল সিটি।
এই জয়ের সঙ্গে ফিরে এসেছে বড় একটি স্বস্তিও। চোট কাটিয়ে দীর্ঘদিন পর মাঠে ফিরেছেন ২০২৪ সালের ব্যালন দ’র জয়ী রদ্রি।
চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল ও আর্সেনালের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলা নিশ্চিত হয়েছে। ৩৭ রাউন্ড শেষে লিভারপুলের পয়েন্ট ৮৩, আর্সেনালের ৭১। সিটি ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে উঠে এসেছে তৃতীয় স্থানে। নিউক্যাসল ইউনাইটেড, চেলসি ও অ্যাস্টন ভিলা রয়েছে চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে। ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম স্থানে থাকা নটিংহ্যাম ফরেস্টও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দৌড়ে রয়েছে।
তিন দিন আগে এফএ কাপের ফাইনালে ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করেছিলেন মার্মুশ। এবার সেই হতাশা ভুলিয়ে শুরুতেই চোখ ধাঁধানো এক গোল করেন তিনি। ১৪তম মিনিটে কোভাচিচের পাস পেয়ে প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে জোরালো শটে বল জালে পাঠান মিশরীয় এই ফরোয়ার্ড।
চলতি লিগে সিটির হয়ে এটি তার সপ্তম গোল। ২২তম মিনিটে একেবারে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো সুযোগ পেয়েছিলেন ডে ব্রুইনে। মার্মুশের পাস ধরে ফাঁকা পোস্ট পেয়েও ৬ গজ বক্স থেকে শট নেন তিনি, কিন্তু তা লাগে ক্রসবারে! গুয়ার্দিওলার মাথায় হাত, গ্যালারিতে হতবাক দর্শক।
প্রথম আধা ঘন্টায় মাত্র একটি শট নিতে পারা বোর্নমাউথ ৩৩তম মিনিটে প্রায় গোল পেয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু এভানিলসনের শট লাগে পোস্টে। ৩৮তম মিনিটে গোলমুখে প্রতিপক্ষের দুর্বল ক্লিয়ারেন্সের সুযোগ নিয়ে ইলকাই গিনদোয়ানের পাসে কাছ থেকে গোল করে ব্যবধান বাড়ান বের্নার্দো সিলভা।
৬৭তম মিনিটে বড় ধাক্কা খায় সিটি। এভানিলসনকে পেছন থেকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন কোভাচিচ। ঠিক দুই মিনিট পর তুলে নেওয়া হয় ডে ব্রুইনেকে। সিটির হয়ে ঘরের মাঠে এটিই ছিল তার শেষ ম্যাচ। ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বিদায় জানান তিনি।
বেশি সময় পেরোয়নি, বোর্নমাউথও পড়ে ১০ জনের দলে। ডে ব্রুইনের বদলি গনসালেসকে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন লুইস কুক। ৮৩তম মিনিটে হলান্ডকে উঠিয়ে নামানো হয় রদ্রিকে। ছয় মিনিট পর তার স্বদেশি গনসালেস তৃতীয় গোলটি করে ব্যবধান আরও বাড়ান।
ছয় মিনিট যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে কানাডার ফরোয়ার্ড ড্যানিয়েল জেসিসন বোর্নমাউথের হয়ে সান্ত্বনার একমাত্র গোলটি করেন।
শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ডে ব্রুইনের ‘বিদায় পর্ব’। দুই হাত তুলে গ্যালারির দিকে নেড়ে শেষবারের মতো মাঠ ছাড়েন তিনি। মুখে ছিল বিদায়ের চাপা কষ্ট।
তবে সিটির এখনও একটি ম্যাচ বাকি—ফুলহ্যামের মাঠে আগামী রোববার। ওই ম্যাচ থেকে একটি পয়েন্ট পেলেই আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নিশ্চিত হয়ে যাবে সাবেক চ্যাম্পিয়নদের।ঞঞ
