নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন ছাত্রসংগঠনগুলোর গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইসলামী ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার, সহসভাপতি মনীষা ওয়াহিদ, স্কুলছাত্রবিষয়ক সম্পাদক একরামুল হক জিহাদসহ গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতা–কর্মীরা। এ সময় তারা নেতাদের বাড়িঘরে হামলার হুমকিদাতাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি তামজীদ হায়দার চঞ্চল। তিনি বলেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে খালাস দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারা দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। এর ধারাবাহিকতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের এবং চট্টগ্রাম শহরে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে ছাত্রশিবির হামলা চালায়। ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’-এর ব্যানারে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ এসব হামলায় জড়িত। এতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের প্রায় ৩০ জন নেতা–কর্মী আহত হন।
তিনি বলেন, ৩০ মে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকারের পরিবার, সহসভাপতি মনীষা ওয়াহিদ এবং স্কুল ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক একরামুল হক জিহাদকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এসব হুমকি স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের ধারাবাহিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অংশ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, দেশের জনগণ যে বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে ছাত্রশিবির সেই আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করেছে। ভিন্নমতের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্যাগিং, পেশিশক্তি ও মব-সন্ত্রাস ব্যবহার করছে তারা, যা গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস গঠনে বাধা সৃষ্টি করছে।
জামায়াত-শিবিরের হাতে নারী আন্দোলন কর্মীরা আক্রমণের শিকার হয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, এই সন্ত্রাসী তৎপরতার মধ্যেও তারা ক্ষান্ত হয়নি; একের পর এক হুমকি দিয়ে যাচ্ছে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা–কর্মীদের।
ছাত্র ইউনিয়নের দাবি, শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নতুন নয়। ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা শাহাদাত হোসেনকে জবাই করে হত্যা করে তারা। ১৯৮৮ সালে ডাক্তার জামিল আক্তার রতনকে কুপিয়ে ও রগ কেটে হত্যা করে। একই বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাসদ নেতা জালালকে হত্যা করে। এছাড়া নিহত হন সঞ্জয় তলাপাত্র এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তপন।
সংবাদ সম্মেলন থেকে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবি জানানো হয়:
- মহান মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে
- ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে
- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরকে বদল করতে হবে
- হুমকিদাতাদের চিহ্নিত করে শিমুল কুম্ভকার, মনীষা ওয়াহিদ ও একরামুল হক জিহাদকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে
- ‘নাস্তিক’, ‘শাহবাগি’ ট্যাগ দিয়ে চরিত্রহননের চেষ্টা বন্ধ করতে হবে
- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সোচ্চার ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে
সংবাদ সম্মেলনে শিমুল কুম্ভকারসহ ছাত্র ইউনিয়নের অন্যান্য নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।