কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বহাল, বাড়ল ফ্ল্যাটে করের হার

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেছেন আজ সোমবার। এ বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছেন তিনি। একইসঙ্গে অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কেনা ও ভবন নির্মাণে কালোটাকা ব্যবহারের সুযোগ বহাল রাখার কথাও জানানো হয়েছে। তবে এলাকাভেদে করের হার আগের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে।

এনবিআরের ঘোষিত শর্ত অনুযায়ী, নির্দিষ্ট হারে কর পরিশোধ করলে টাকার উৎস নিয়ে আর ব্যাখ্যা দিতে হবে না। ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের বেশি ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ২ হাজার টাকা এবং এর কম হলে ১ হাজার ৮০০ টাকা কর নির্ধারণ করা হয়েছে।

ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বনশ্রী, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা ও নিকুঞ্জ এলাকা এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের বেশি ফ্ল্যাটের কর নির্ধারিত হয়েছে প্রতি বর্গফুটে ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং ২ হাজার বর্গফুটের কম হলে প্রতি বর্গফুটে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

এই তালিকার বাইরের সিটি করপোরেশন এলাকায় ১ হাজার ৫০০ বর্গফুটের বেশি আয়তনের ফ্ল্যাটের কর প্রতি বর্গফুটে ৭০০ টাকা এবং এর কম হলে ৬০০ টাকা ধরা হয়েছে। জেলা সদরের পৌর এলাকায় ১ হাজার ৫০০ বর্গফুটের বেশি আয়তনের ফ্ল্যাটে কর হবে প্রতি বর্গফুটে ৩০০ টাকা এবং এর কম হলে ২৫০ টাকা। অন্য যেকোনো এলাকায় বড় ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে কর হবে প্রতি বর্গফুটে ১৫০ টাকা এবং ছোট ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা।

ফ্ল্যাট কেনার পাশাপাশি ভবন নির্মাণেও একই সুবিধা বহাল থাকবে। এখানে এলাকাভেদে প্রতি বর্গফুটে ৫০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত কর নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে অপ্রদর্শিত আয়ের উৎস যদি বর্তমানে কার্যকর কোনো আইনের অধীনে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত হয় কিংবা কোনো বৈধ উৎস থেকে না আসে, তাহলে তা এই আইনের আওতায় বৈধ করা যাবে না বলে শর্ত রাখা হয়েছে।

গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার এ সুবিধা বাতিল করেছিল। কিন্তু এবার নতুন করে কর হার বাড়িয়ে এ সুযোগ আবারও চালু রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

আগের সরকার শেখ হাসিনার সময় চলমান বাজেটে নগদ টাকা ছাড়াও জমি, ফ্ল্যাট বা প্লট কেনার মাধ্যমে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ ছিল। এ বিষয়ে শুরু থেকেই অর্থনীতিবিদদের তীব্র সমালোচনা ছিল। অনেকেই এটিকে সৎ করদাতাদের প্রতি অবিচার বলে অভিহিত করেন।

অন্তর্বর্তী সরকার এ সুবিধা বাতিল করলেও আয়কর আইনের তফসিলে তা বহাল থাকছে। যদিও এ ধরনের সুযোগ বারবার দেওয়ার পরও অবৈধ অর্থ সাদা করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সাড়া পাওয়া যায়নি। এনবিআর সূত্র মতে, এ পর্যন্ত প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা সাদা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের আমলে এ ধরনের কোনো সুযোগ ছিল না।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত আনার জন্য বিশেষ সুযোগ থাকলেও কেউ তা গ্রহণ করেননি। পরের বছর আবারো কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ চালু করা হয়।