এনবিআর আন্দোলন দ্রুত সমাধানে সরকারের প্রতি ব্যবসায়ীদের আহ্বান

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মীদের চলমান আন্দোলনের দ্রুত সমাধানে সরকারকে অতি দ্রুত আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে বিজিএমইএ, বিটিএমএসহ ব্যবসায়ীদের ১১টি সংগঠন।

শনিবার ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, ‘‘উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে মোটেও সময় ব্যয় না করে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নেতৃত্বে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিডার যৌথভাবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা খুবই জরুরি।”

লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী।

জিডিপির তুলনায় কর আদায়ের অনুপাত বাড়ানো, কর ছাড় যৌক্তিক পর্যায়ে আনা এবং আইএমএফের ঋণচুক্তির শর্ত পূরণের লক্ষ্যেই এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নেয় সরকার। আন্দোলনের মুখে বিলুপ্তির অধ্যাদেশ স্থগিত হলেও চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ নানা দাবিতে এনবিআরের কর্মচারীরা শনিবার সকাল থেকে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন।

ফলে বন্দরে খালাস ও রপ্তানির অপেক্ষায় থাকা পণ্যর শুল্কায়ন ও দাপ্তরিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।

বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হোসেন খান বলেন, “এনবিআর কর্মচারীদের আন্দোলনে দৈনিক আড়াই হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। আমি বলব না, এ পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে, ব্যাহত হচ্ছে।”

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ বলেন, “এনবিআরের লোকজন এতদিন আমাদের জ্বালাইছে, এখন সরকারকে জ্বালাইতাছে।”

বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী বলেন, “জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের অপসারণ কোনোমতেই কাম্য নয় এবং তা কোনো প্রকার সফলতা নিয়ে আসবে বলে আমরা মনে করি না।”

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কলম বিরতিতে দেশের আমদানি-রপ্তানি মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। রপ্তানিকারকরা সময়মত আমদানিকৃত কাঁচামাল খালাস করতে পারছেন না। ফলে রপ্তানিতে লিড টাইম বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে পণ্য পড়ে থাকায় তা নষ্ট হচ্ছে। আংশিক কর্মঘণ্টার কারণে এক কর্মদিবসে প্রত্যাশিত ইউপি পেতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগছে।

চলমান সমস্যা সমাধানে সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে সাতটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়:

১. আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন সেবা নিশ্চিত করা।
২. রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এনবিআরের কার্যক্রম আলাদাকরণ–সংক্রান্ত অধ্যাদেশ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে বাস্তবায়ন।
৩. হয়রানিমুক্ত সেবা নিশ্চিতে এনবিআরসহ সব জাতীয় প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
৪. বিনিয়োগ ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত আধুনিকায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা।
৫. অর্থ, বাণিজ্য, শিল্পসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে নির্দেশ দেওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত কর্মচারীদের কোনো ধরনের শর্ত ছাড়া কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়।

অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, মেট্রো চেম্বার সভাপতি কামরান টি রহমান এবং সিরামিক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিসিএমইএর সভাপতি মঈনুল ইসলাম।