আলিফ হত্যা মামলায় চিন্ময় দাস প্রধান আসামি, চার্জশিটে ৩৮ জন

চট্টগ্রামের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে প্রধান আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী) মাহফুজুর রহমান মঙ্গলবার মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেন।

তিনি জানান, মামলায় মোট ৩৮ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এজাহারে থাকা ৩১ জনের মধ্যে তিনজনকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে, বাকি ২৮ জনকে রাখা হয়েছে। এছাড়া তদন্তে উঠে আসা আরও ১০ জনকে নতুন করে আসামি করা হয়েছে।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান কোতোয়ালী থানায় চিন্ময়সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। এরপর চিন্ময়সহ কয়েকজন গ্রেপ্তার হন।

২৬ নভেম্বর চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর সময় আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শুরু করেন সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আড়াই ঘণ্টা পর বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময়কে কারাগারে নিয়ে যায়।

এই সময় আদালত সড়কে মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করেন বিক্ষোভকারীরা। সাধারণ আইনজীবী ও আদালতের কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ খুন হন।

চিন্ময় পুলিশ হেফাজতে থাকলেও কেন তাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে—এই প্রশ্নে তদন্ত কর্মকর্তা জানান, জামিন না হওয়ায় চিন্ময় আদালত প্রাঙ্গণে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন, যা থেকে উত্তেজিত হয়ে অন্য আসামিরা হামলা চালায়।

তিনি বলেন, “হুকুমদাতা হিসেবে চিন্ময় দাস এই মামলার প্রধান আসামি। গ্রেপ্তার আসামিদের জবানবন্দি ও জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযোগপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে।”

অভিযোগপত্রে বলা হয়, সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে সেদিন আইনজীবী আলিফকে হত্যা করা হয়।

আসামি করা ৩৮ জনের মধ্যে ২০ জন বর্তমানে গ্রেপ্তার অবস্থায় আছেন এবং বাকি ১৮ জন পলাতক।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী পিপি মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী জানান, শুনানির জন্য দিন ধার্য হলে আদালতে অভিযোগপত্র তোলা হবে।

আলিফ হত্যার ঘটনায় গত বছরের ২৯ নভেম্বর তার বাবা জামাল উদ্দিন কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন। সেখানে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১৫/১৬ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়, যাদের সবার বাসা রঙ্গম কনভেনশন হলের পাশে বান্ডেল সেবক কলোনিতে।

গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রাজীব ভট্টাচার্য্য ও রিপন দাস আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।