জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সব সময় জনগণের পাশে থেকে জনগণের রাজনীতি করবে বলে জানিয়েছেন দলের দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, জনগণ পাশে থাকলে কোথাও পালাতে হয় না। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কোনো মার্কার কাছে, কোনো দলের কাছে আমাদের বিবেক যেন বন্ধক না দিই, সে বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’
আজ মঙ্গলবার বিকেলে মেহেরপুরের গাংনী পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ডে জাতীয় নাগরিক কমিটির জুলাই পদযাত্রার পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ক্ষমতার উৎস দিল্লি নয়, ক্ষমতার উৎস বসুন্ধরা গ্রুপ নয়, ক্ষমতার উৎস এস আলম নয়। ক্ষমতার উৎস কোনো ব্যবসায়ী নয়। ক্ষমতার উৎস কেবল জনগণ। জনগণ যদি পাশে থাকে তবে দিল্লি পালাতে হয় না, লন্ডন থাকতে হয় না। জনগণ যদি পাশে থাকে তাহলে এই ৫৬ হাজার বর্গমাইলে জন্ম ও মৃত্যু হয়। আমরা কোনো পিন্ডির ওপরে, কোনো দিল্লির ওপরে, কোনো আমেরিকার ওপরে নির্ভর করতে চাই না।’
যোগ্যতা দেখে নেতৃত্ব নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে যত জনপ্রিয়, যে যত জনগণের কাছে যাচ্ছেন, যে জনগণের ভাষা বোঝেন, জনগণের সমস্যা বোঝেন; আমরা তাঁকেই নেতা নির্বাচন করব। আমাদের দেশে নেতা তৈরি হয় নির্বাচনের আগে। ঢাকা থেকে বস্তায় বস্তায় টাকা নিয়ে এলাকায় প্রবেশ করেন, তাঁরা নির্বাচনের আগের রাতে পুলিশ ও এজেন্ট কিনে নেন। এলাকার ওসিকে কিনে নেন। এসপিকে কিনে নেন। আমাদের এলাকা এমন ছিল। সময় এসেছে সচেতন হওয়ার। যে নেতা টাকা নিয়ে আসবেন, মনে রাখবেন সেই নেতা একদিন আপনাকে টাকা দেবেন আর পাঁচ বছর আপনাদের গোলামি করাবেন। নির্বাচনের আগে যেই নেতা আপনাদের টাকা দেবে, সেই নেতা পরে আপনাদের মালিক হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি কোনো ব্যবসায়ীর কাছে বর্গা দিইনি। আমরা জনগণ থেকে অর্থ সংগ্রহ করব। আপনাদের কাছ থেকে ১০ টাকা, ২০ টাকা, ১০০ টাকা অর্থ সংগ্রহ করে আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করব। যখন রাজনীতিবিদেরা ব্যবসায়ীদের কাছে নিজেদের রাজনীতি বন্ধক দেন, তখন ব্যবসায়ীদের স্বার্থে পলিসি তৈরি করতে হয়।’
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আগের প্রজন্ম ভণ্ডামিকে নাম দিয়েছে কৌশল। তারা মিথ্যাকে নাম দিয়েছে রাজনীতি।
সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় মেহেরপুর শহীদ শামসুজ্জোহা পার্ক থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে সরকারি কলেজ মোড়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। সেখানে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালে এই মেহেরপুর থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়েছিল। সেই ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশ বিনির্মাণ হয়। কিন্তু মুজিববাদী সংবিধানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষাকে নস্যাৎ করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের ৫৪ বছরের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি।
তিনি বলেন, ‘২৪–এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ার সুযোগ এসেছে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের বৈষম্যহীন বাংলাদেশের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করবে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ। ফলে মেহেরপুর থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের যে ডাক এসেছিল, আমরা চাচ্ছি নতুন করে জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র তৈরি করবো। সেই জুলাই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রূপরেখা তৈরি হবে।’
পদযাত্রা ও পথসভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকার, জেলা এনসিপির যুগ্ম সম্পাদক সাকিল আহম্মেদ প্রমুখ অংশ নেন।