ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহামুদা বেগমের মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা।
মঙ্গলবার এনসিপির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাকে এ দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানানো হয়।
ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও শরীয়তপুর জেলায় এনসিপির কমিটি প্রস্তাব করার জন্য একটি টিম গঠন করা হয়েছে। সেখানে অঞ্চল তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আছেন মো. আবদুর রহমান। আর মো. রাকিব হোসেন আছেন সংগঠক হিসেবে। এই টিমকে জেলার সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে ৩০ দিনের মধ্যে কমিটি প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে ফরিদপুর জেলায় সদস্য হিসেবে আছেন সৈয়দা নীলিমা দোলা।
এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাক্ষরিত ওই চিঠি প্রকাশ হওয়ার পর ফরিদপুরের বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
দোলা ফরিদপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদা বেগমের মেয়ে এবং জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ নাসিরের ভাগ্নি। তার বাবা সৈয়দ গোলাম দস্তগির একজন ব্যবসায়ী। নীলিমা ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ থেকে মাস্টার্স করেন। এরপর কিছুদিন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেছেন। বর্তমানে ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি মিডিয়া কোম্পানির স্বত্বাধিকারী তিনি।
সমালোচনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দোলা বলেন, “আমার পরিবারের আওয়ামী রাজনীতি করা সংক্রান্ত কিছু পোস্ট আপনাদের সামনে আসতে পারে। আমি নিজের দিক থেকে একটা ব্যাখ্যা আমার মানুষজন এবং রাজপথের সহযোদ্ধাদের দিয়ে রাখতে চাই। আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন আমি করে আসতেছি দীর্ঘ দশ বছর ধরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নো মেট্রো অন ডিইউ’ মুভমেন্ট, রামপালবিরোধী আন্দোলন, ডিএসএ বাতিলের আন্দোলন, সুফিয়া কামাল হলকে ছাত্রলীগমুক্ত করাসহ অন্যান্য সব আন্দোলনের অতি পরিচিত মুখ আমি। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লেখালেখিও পুরোনো।”
দোলা বলেন, “২০১২ সালে পরিবার ছাড়ার পর রাজপথই আমার আসল পরিবার। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া তাহির জামান প্রিয় হত্যা মামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি। সরাসরি ছাত্রলীগ করে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তাই আমার নাগরিক কমিটির সদস্য হতে বাধা কোথায়? এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেনে শুনে বুঝে এবং আমি ‘লিটমাস’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেই আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করেছেন।”
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব সোহেল রানা বলেন, “তার (দোলা) পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ। আমরা দেখেছি, গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার মামা গোলাম নাসির কীভাবে আমাদের উপর নির্বিচারে গুলি ছুড়েছে। তার মায়ের কর্মকাণ্ডও আমাদের অজানা নয়।”
তবে দোলার সঙ্গে পরিচয় নেই মন্তব্য করে সোহেল বলেন, “আসলে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে নিলে ভালো হত। সঠিক যাচাই-বাছাই করা হলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হত না।”