জনগণের ‘ম্যান্ডেট ছাড়া’ কোনো পরিবর্তনই ‘টেকসই’ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘১০ জন লোক ঢাকায় বসে’ বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “কোনো পরিবর্তন টেকসই হবে না, যদি জনগণের ম্যান্ডেট না থাকে। আমরা বহু আগে বহু কিছু করেছি, কোনোটাই টিকে নাই। জনগণের মাধ্যমে যেটা পরিবর্তন হবে, সেটাই একমাত্র পরিবর্তন।”
অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, সেখানে যারা যত দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে গেছে, তারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পেরেছে। আর দ্বন্দ্ব করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে যারা পিছিয়েছে, তারা তা পারেনি।”
তিনি বলেন, “জনগণকে বাইরে রেখে এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব দিয়ে পরিবর্তন সম্ভব নয়। এজন্য যেসব বিষয়ে আমরা ঐক্যমত্যে পৌঁছাবো, তার বাইরে সময় নষ্ট করা উচিত হবে না।”
রাষ্ট্র সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে তিনি বলেন, “আমার কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা অন্য দলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে। আপনি ১০ বছর ঐক্যমত্য কমিশনের আলোচনা চালালে হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হলে জনগণের কাছ থেকে ম্যান্ডেট নিতে হবে। আর কিছু, ১০ জন লোক ঢাকায় বসে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারবে না।”
‘তাদের মধ্যে পরিবর্তন আসেনি’
জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি আয়োজিত এই সভায় আমীর খসরু বলেন, “গোপালগঞ্জের এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তবে যে দলটি এই কাজ করেছে, তাদের রাজনীতির শুরু থেকেই এমন। ওদের কোনো পরিবর্তন আসেনি। ওদের রাজনীতি পেশী শক্তির, এর মাধ্যমে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।”
তিনি বলেন, “এটা আওয়ামী লীগের ডিএনএ এর মধ্যে আছে। গোপালগঞ্জে যা দেখেছি, পলাতক শক্তির রাজনীতি জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে, তবুও তাদের মধ্যে পরিবর্তন আসেনি।”
‘গোপালগঞ্জে কেন এই মৃত্যু’
গোপালগঞ্জের সহিংসতায় সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “গোপালগঞ্জে যা হলো, আমি স্তম্ভিত। সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে? নাকি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চারজন মরুক, তারপর বিবৃতি দেবে? চারজন মানুষ মারা গেছে, তারা যে দলেরই হোক, তার মৃত্যু কাম্য নয়। শান্তিপূর্ণ দেশ চাইলে সরকারের দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।”
‘গোপালগঞ্জে কেন গেছেন’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “কেন গোপালগঞ্জে গিয়ে মুজিববাদকে কবর দিতে হবে, সেটা কি সেখানেই বলতে হবে? মুজিববাদ পঁচাত্তরের পর আওয়ামী লীগই কবর দিয়েছে। যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে মানুষের মনস্তত্ত্ব ও সংবেদনশীলতা বুঝে কথা বলা উচিত। আওয়ামী লীগকে নতুন করে ফিরে আসার জমিন তৈরি হচ্ছে কিনা, সেটাও ভাবা দরকার।”
‘পুলিশ দাঁড়িয়ে তামাশা দেখল’
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, “গোপালগঞ্জের ঘটনায় পুলিশ দাঁড়িয়ে তামাশা দেখল। যে সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সরকার গঠিত হয়েছিল, তার কিছুই বাস্তবে দেখছি না। পুলিশের কোনো দৃশ্যমান সংস্কার নেই। মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবগুলো মেনে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।”
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান-সংস্কারের রূপরেখা’ শীর্ষক এই সভায় সভাপতিত্ব করেন জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব এবং সঞ্চালনা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। সভায় আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী জনশক্তি পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, গণফোরামের মিজানুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক নঈম জাহাঙ্গীর, জেএসডির সিরাজ মিয়া ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হেলালুজ্জামান।