অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের বিরুদ্ধে আলাদা চারটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ এসব মামলা দায়ের করা হয়। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মামলা দায়েরের তথ্য দেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
তারিক সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ‘জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ’ ২৮ কোটি ৫৯ লাখ ৬৩ হাজার ২৩২ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এই মামলার বাদী।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘ক্ষমতার অপব্যবহারের’ মাধ্যমে তিনি এই সম্পদ অর্জন করেন। তার চারটি ব্যাংক হিসাবে ৬২ কোটি ৬০ হাজার ৯৮৩ টাকার ‘সন্দেহজনক’ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে, যা ‘অবৈধভাবে’ অর্জিত অর্থ।
দুদক জানায়, এই লেনদেন মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের বিভিন্ন ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তদন্তে দেখা গেছে, তারিক সিদ্দিকের স্থাবর সম্পদের মূল্য ২৪ কোটি ৬০ লাখ ২৪ হাজার ৭৭৪ টাকা এবং অস্থাবর সম্পদের মূল্য ১৯ কোটি ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৮৬২ টাকা। পারিবারিক ব্যয় ও দায়-দেনাসহ হিসাব অনুযায়ী ২৮ কোটি ৫৯ লাখ ৬৩ হাজার ২৩২ টাকা ‘অস্পষ্ট উৎসের’ সম্পদ।
স্ত্রী ও কন্যাদের বিরুদ্ধেও মামলা
বাকি তিনটি মামলায় স্ত্রী ও দুই মেয়েকেও আসামি করা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর বাদী হয়ে দ্বিতীয় মামলায় তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী শাহিন সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি ৭৬ লাখ ৯৩ হাজার ২১৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনেছেন। তার ১১টি ব্যাংক হিসাবে ৫৯ কোটি ৩৮ লাখ ৩৭ হাজার ৩৮৭ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্যও পাওয়া গেছে।
তার মেয়ে নুরিন তাসমিয়া সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ১৭ হাজার ১৯২ টাকা এবং আরেক মেয়ে বুশরা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ৪ কোটি ২ লাখ ৯৭ হাজার ৮৬ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তদন্তে নতুন কোনো তথ্য বা অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন তারিক সিদ্দিক। গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার পরিবারের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়।
এর আগে গুমের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার তালিকায় শেখ হাসিনার সঙ্গে তারিক সিদ্দিকের নামও ছিল।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে আর্থিক অনিয়ম এবং তিন বিমানবন্দরের প্রকল্পে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগেও তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
আদালত তারিক সিদ্দিক, শাহিন সিদ্দিক ও নুরিন সিদ্দিকের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ১৩টি হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছেন, যেখানে ৬ কোটি ৭৯ লাখ ৬৭ হাজার ২৭১ টাকা রয়েছে।
তাদের ২৪ বিঘা জমি, পাঁচটি প্লট ও পাঁচটি ফ্ল্যাটও জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জব্দ হওয়া সম্পদের মধ্যে আছে বারিধারার দুটি ৭ তলা ভবনের ফ্ল্যাট, পূর্বাঞ্চলের নতুন শহরে ২০ কাঠা জমির চারটি প্লট এবং বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি প্লট।