অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ‘পক্ষপাতমূলক’ আচরণের অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
শুক্রবার রাজধানীর নয়া পল্টনে দলের এক সমাবেশে তিনি বলেন, “আজ এ সরকারকে বলতে চাই, আপনারা দয়া করে একটু পক্ষপাতমূলক আচরণটা বন্ধ করেন। এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে।”
কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, “একটি দলকে আপনি কোলে রেখেছেন, আর একটি দলকে রেখেছেন কাঁধে। এক দলকে কোলে রাখবেন, আরেক দলকে কাঁধে রাখবেন, আর বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার পাঁয়তারা করবেন—এই চিন্তা কখনো কইরেন না।”
মির্জা আব্বাস বলেন, “আপনারা সরকারে এসেছেন, আমরা স্বাগত জানিয়েছি, আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি, সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছি। আপনারা খুব তাড়াতাড়ি একটি নির্বাচন দেন। দিলে দেশে যে অশান্ত পরিস্থিতি আছে, তা ঠান্ডা হয়ে যাবে। না দিলে আমরা ভাবব, দেশ অশান্ত করার প্রক্রিয়া আপনারাই করছেন দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার জন্য।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এদিন নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মৌন মিছিল বের করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে মিছিল বের হয় মিরপুরের পল্লবী ১২ নম্বর বিআরটিসি বাস ডিপোর কাছ থেকে।
নয়া পল্টনের মিছিলে মির্জা আব্বাস এবং পল্লবীর মিছিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, “যে জামায়াত এক সময়ে বিএনপির কাঁধে পা দিয়ে মন্ত্রিত্ব পেয়েছে, এক সময় আওয়ামী লীগের কাঁধে পা দিয়ে দালালি করেছে, বিভিন্ন সময়ে দালালি করেছে, তারাও এই আমার শাহাদাত বরণকারী ভাইদের ওপরে চেপে বসেছে। তাদেরকে বেঁচেই, তাদেরকে বিক্রি করেই তাদের আজকের পুঁজি। শাহাদাতবরণকারী ভাইয়েরা সবসময়ে একটি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ চেয়েছিল, আমরাও ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ চাই।”
তিনি আরও বলেন, “একজন তথাকথিত পীর সাহেব, তার নাম বলতে চাই না। তিনি বলেছিলেন, জামায়াতের ছোঁয়া যেখানে লাগবে, সেই জায়গা পচে যাবে। উনি আজ জামায়াতের কোলে গিয়ে বসেছেন।”
বিএনপির বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ তুলে মির্জা আব্বাস বলেন, “বিএনপিকে আজকে অনেকে আওয়ামী লীগের কাতারে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ওই দিন দেখলাম, একটা ছেলে বিএনপি সম্পর্কে বলছে যে, গিনেস বুকে লেখা থাকবে, কীভাবে একটি দল সারা বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অর্থাৎ, তারা আমাদেরকে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। আমি বলব, ভাইয়েরা দয়া করে জিহ্বায় একটু লাগাম দেন। এমন কোনো কথা বলবেন না, যে কথা শুনে মানুষের রক্তে আগুন ধরে যায়।”
তিনি বলেন, “আমাদের অন্য কোনো দিকে নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আপনারা পায়ে পারা দিয়ে বিএনপির সঙ্গে ঝগড়া-ঝাঁটি চালানোর চেষ্টা করছেন। বিএনপি ঝগড়া করবে না, বিএনপি ঝগড়া করার দল নয়। বিএনপি একটি গণতন্ত্রকামী দল, বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে, মানুষকে সঙ্গে নিয়ে। সেখানে যদি আপনারা বাটে পড়ে যান, তখন আমাদের কিছু করার থাকবে না।”
মির্জা আব্বাস বলেন, “৫ অগাস্টের পরে বলতেছেন লম্বা লম্বা কথা। আগে কিন্তু বলতেন না। আমি জানি না কোথায় শক্তি পেলেন, সাহস পেলেন। আপনারা শক্তিশালী হন, সাহসী হন—দোয়া করি। কিন্তু একটি সাচ্চা দেশপ্রেমিক দল বিএনপির বিরুদ্ধে অনর্থক কুৎসা রটাবেন না। সেদিন মর্মান্তিক একটি হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেখানে বিএনপিকর্মীকেই হত্যা করা হয়েছে। অথচ সেটিকে ঘিরে তারা বলছে, বিএনপিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত তাদের আর কোনো কাজ নেই। অর্থাৎ ক্ষমতায় যেতেই হবে।”
তিনি বলেন, “অনেকে বলছে, বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। আমার কথা হলো, বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়নি। বিএনপি ১৭ বছর রাজপথে আন্দোলন করেছে দেশের মানুষের গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের জন্য। আজ সেই সুযোগ নিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে আপনারা ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ভাবছেন, বিএনপি না থাকলে আপনাদের পথ সহজ হবে। আরে ভাই, বিএনপির একজন নেতাকর্মী জীবিত থাকতে কখনোই এই খায়েশ পূরণ হবে না।
“বিএনপির নেতাকর্মীরা দেশে ছিল, আন্দোলনের প্র্যাকটিস করেছে রাস্তায়, জেলখানায় জীবন কাটিয়েছে। আমাদের ভয় দেখাবেন না। জীবন ও যৌবনের অর্ধেক সময় রাস্তায় আর জেলে কাটিয়ে দিয়েছি।”