বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের বিরুদ্ধে ‘অপেশাদারত্বের’ যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে তিনি বলেছেন, তার কাজের কোনো ব্যত্যয় হয়েছে বলে মনে করেন না।
তাই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার কোনো অভিপ্রায়ও তার নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
সি আর আবরার বলেন, “সচিবকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে উচ্চতর কমিটির সিদ্ধান্তে। আমি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। আমার কাজের কোনো ব্যত্যয় হয়েছে বলে আমি মনে করি না। আমার নিয়োগকর্তা রয়েছে। তারা যেতে বললে আমি অবশ্যই চলে যাব। আঁকড়ে ধরে থাকার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।”
বুধবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে শিক্ষা উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, “সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। এখানে কোনো রকমের অব্যবস্থাপনা হয়নি। প্রয়োজনে মামলা করেন, কোর্টে যান। ন্যূনতম সৌজন্যতা যদি না রাখেন, তাহলে আমাদের পক্ষে কথা বলা সম্ভব হবে না।”
দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সোমবার জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের দাবি ওঠে। মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতায় পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা আসে সোমবার রাত ৩টার দিকে। অনেক শিক্ষার্থীর কাছে সেই খবর না পৌঁছানোয় কেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসতে হয় তাদের।
শিক্ষা উপদেষ্টার বরাতে তথ্য উপদেষ্টা গভীর রাতে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি ফেইসবুকে জানান। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে পরে, যা নিয়ে ক্ষোভ ছড়ায়।
এরপর শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়লে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। চাপের মুখে ওইদিন শিক্ষা সচিবকে প্রত্যাহার করে নেয় সরকার।
পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্তে বিলম্ব নিয়ে আবরার বলেন, একক সিদ্ধান্তে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। বিমান বিধ্বস্তের পর পরীক্ষা চালিয়ে নেওয়া ও স্থগিত করার দুই পক্ষেই অভিভাবক মহল থেকে প্রস্তাব এসেছে।
তিনি বলেন, “অনেক শিক্ষার্থী ও পিতামাতা বলেছেন পরীক্ষা স্থগিত কেন দ্রুত নেওয়া হল না। বাস্তবতা হচ্ছে এই ধরনের সিদ্ধান্ত হুট করে নেওয়া যায় না। একটু সময় লাগে। আরও আগে নেওয়া গেলে ভালো হত। কিন্তু আগে নেওয়া যায়নি সঙ্গত কারণে। পরীক্ষা সূচি নির্ধারণ ও কোনো কারণে পরীক্ষা স্থগিত করতে হলে তা কিছু প্রক্রিয়া মেনে করতে হয়।”
তিনি যোগ করেন, “একটা ধারণা সবার মাঝে রয়েছে যে, একক সিদ্ধান্তে এই কাজটি করা যায়। এটা সঠিক নয়। পরীক্ষাটা যেন নিয়ে নেই এমন প্রস্তাবও এসেছিল।”
শিক্ষার্থীদের তালিকা হস্তান্তরে নির্দেশ
মাইলস্টোন অ্যান্ড কলেজে আগের দিন শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে নয় ঘণ্টা আটকা থাকতে হয় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং শফিকুল আলমকে। নয় ঘণ্টা পর পুলিশি পাহারায় সেখান থেকে বের হন তারা।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “কালকে দুইজন উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সেখানে গিয়েছিলাম। সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমবেদনা জানাতে ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়েছিলাম।”
তিনি বলেন, তারা বল প্রয়োগ করে ক্যাম্পাস থেকে বের হতে চাননি, প্রয়োজনে এক-দুই দিন থাকার মানসিক প্রস্তুতিও ছিল তাদের।
“যাওয়ার আগেই আমরা ছয় দফা দাবিনামা পেয়েছিলাম। দাবিগুলো যৌক্তিক ছিল। দুই-একটি দাবি সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম ওটা সেখানেই শেষ হবে। কোনো কারণে আমাদের অবস্থান আরও দীর্ঘ হলো। বাইরের থেকেও লোকজন আসলেন। আমরা কখনো চাইনি বল প্রয়োগের মাধ্যমে সেখান থেকে আসি। প্রয়োজনে এক-দুই দিন থাকার মানসিক সিদ্ধান্তও নিয়েছিলাম। পরে চলে আসি।”
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির কিছু আগেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ঘটনাটা ঘটেছে নির্দিষ্ট এলাকায়। যেখানে প্রতিটি ছাত্রের নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে। শিক্ষকদের নামও রয়েছে। হাটে-বাজারে বা রেল স্টেশনে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে লাশ গণনা করা মুশকিল হত। আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদের তালিকা হস্তান্তর করতে নির্দেশ দিয়েছি। যদি কোনো শিক্ষার্থী মিসিং থাকে অবশ্যই কর্তৃপক্ষ দায়বদ্ধ। আমার জানা মতে এখনও এমন পরিস্থিতি হয়নি।”
লোকালয়ে প্রশিক্ষণ বিমান চলাচলের প্রশ্নে তিনি বলেন, “অবশ্যই এই ধরনের মহড়া পুনর্বিবেচনার দাবিদার। এই ঘটনায় সামাজিক মাধ্যম ও কিছু কিছু মিডিয়াতে এমন তথ্য প্রচার শুরু হলো যা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ছবিগুলো পুরোনো, এআই জেনারেটেড। এ ধরনের দায়িত্বহীন রিপোর্টিং শুধু মানুষকে বিভ্রান্ত করে না, নিহতদের পরিবারকেও অসম্মান করে।”