ঢাকার গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের পুরনো কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে টাঙানো হয়েছে একটি লাল ব্যানার, যাতে লেখা রয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’।
ভবনের ভেতরে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। তবে শুক্রবার বন্ধের দিনে শ্রমিকরা ছুটিতে থাকায় কাজ বন্ধ রয়েছে, কেবলমাত্র মোটর পাম্প ব্যবহার করে ময়লা পানি সরানো হচ্ছে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় নিয়োজিত মাতবর আলী নামে একজন বলেন, “এখানে ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট হবে। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হলে দেখতে পারবেন সবকিছু।”
তবে এ ধরনের কোনো ইনস্টিটিউট গঠনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলটির এই কার্যালয় ছাত্র-জনতার রোষানলে পড়ে। ভবনটি তছনছ করার পর সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর থেকে ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। জায়গাটি ময়লা-আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয় এবং ছিন্নমূল মানুষ, রিকশাচালক ও পথচারীদের শৌচাগার ও নেশার আড্ডায় পরিণত হয়।
মাতবর আলী জানান, গত বুধবার থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু হয়েছে এবং আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এটি শেষ হবে।
ভবনের সামনে বসে থাকা কয়েকজন জানান, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে একটি কার্যালয় গড়ে তোলা হবে। সোহরাব আলী নামের একজন বলেন, “ওই যে লাল কাপড়ে লেখা আছে, সেই অফিসটি হবে।”
কারা এই কাজ করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এতকিছু আপনাকে বলতে পারবো না। সাংবাদিক হইলেও, সব কিছু বলতে আমরা বাধ্য নই। রিপোর্ট করতে আইছেন, দেখে নিজে লেখে নেন।”
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন সড়ক ও স্থাপনার নাম পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের নাম পরিবর্তন করে শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউ করা হয়।
মে মাসে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সব ধরনের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে অন্তর্বর্তী সরকার। দল হিসেবে নিবন্ধনও স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। ফলে দুই যুগের বেশি সময় সরকারে থাকা এ দলটির নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ বন্ধ হয়ে যায়।
ভবনের উল্টো পাশে আমড়া বিক্রি করা রিপন মিয়া বলেন, “আওয়ামী লীগের অফিসটা একবছর আগেই ছাত্ররা ভেঙে দিয়েছে। এখন এখানে শুধু ভাঙা নৌকার একটি অংশ ছাড়া আওয়ামী লীগের কোনো চিহ্ন নেই। এক বছরে এখানে ময়লা-আবর্জনার কারণে প্রচণ্ড দুর্গন্ধে দোকানদারদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
তিনি জানান, কিছুদিন আগে কিছু লোক এসে ভবনটি পরিষ্কারের উদ্যোগ নেয়।
তার পাশে থাকা সোহরাব বলেন, “এই ভবনটা এক বছর এমনে পড়ে আছে… এইডা তো আরও আগেই ঠিক করা দরকার ছিল। আওয়ামী লীগের অফিস… তারাই তো লাপাত্তা… এখন কারো না কারো তো চোখ পড়বই… এটাই হইছে।”
১৯৮১ সাল থেকে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের ঠিকানায় থাকা ভবনটি ভেঙে ২০১৬ সালে নতুন করে নির্মাণ শুরু হয়। ২০১৮ সালে ১০ তলা ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয় এবং ২৩ জুন উদ্বোধন করা হয়।
ভবনের প্রথম থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোর ৪ হাজার ১০০ বর্গফুট এবং চতুর্থ থেকে দশম তলা পর্যন্ত ফ্লোরগুলো ৩ হাজার ১০০ বর্গফুটের।
ভবনে দলীয় কার্যালয়ের পাশাপাশি ছিল মিডিয়া রুম, ডিজিটাল লাইব্রেরি, সম্মেলন কক্ষ, সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির কক্ষ, ভিআইপি ও সাংবাদিক লাউঞ্জ, ডরমিটরি, ক্যান্টিন ও ওয়াইফাই সুবিধা।
একজন ব্যবসায়ী জানান, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার পর থেকে অন্তত আটবার দলীয় কার্যালয় স্থানান্তর করা হয়েছে। রোজ গার্ডেন থেকে শুরু করে নবাবপুর, সদরঘাট, পল্টন হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বর্তমান কার্যালয়টি স্থাপন করা হয়।