জুলাই অভ্যুত্থানের আগে ও পরে লুট হওয়া সরকারি সব অস্ত্র এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “সব অস্ত্র এখনও আমরা উদ্ধার করতে পারি নাই। অস্ত্রগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছি। আল্লায় দিলে হয়ত নির্বাচনের আগে আরও অনেক অস্ত্র উদ্ধার হয়ে যাবে।”
শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইন্স পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “যারা ইলেকশন করবেন, অর্থাৎ রাজনৈতিক দল বা স্বতন্ত্র হিসেবে যারা করতে চান, তারা কিন্তু মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তারা যদি সবাই সহযোগিতা করে তাহলে আমাদের পক্ষে ইলেকশন করা সম্ভব, কোনো সমস্যা হবে না।
“নির্বাচনটা যেন আপনাদের ও জনগণের সহযোগিতায় ভালোভাবে হতে পারে সেই চেষ্টা অবশ্যই আমরা করব। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটা অংশ, কিন্তু সবচেয়ে বড় অংশ হলো যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। দুই নম্বর হলো- ইলেকশন কমিশন, তারপর প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।”
তবে নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘লজিস্টিক সাপোর্টের অভাব নাই’ বলেও মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
এর আগে আদমজীতে র্যাব-১১ এর সদরদপ্তর পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সেখানে তাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ‘পুশ-ইন’ নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
জবাবে তিনি বলেন, “যারা বাংলাদেশি নাগরিক ওইখানে (ভারতে) আছেন তাদেরকে আমাদের নিতে হবে। ১০ বছর বা ২০ বছর হোক; যদি ওইখানে গিয়ে থাকেন এবং বাংলাদেশি হয়ে থাকেন। কিন্তু যারা রোহিঙ্গা তাদেরকে অ্যাকসেপ্ট করছি না, ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
ভারত ‘প্রোপার চ্যানেলে’ বাংলাদেশিদের পাঠাচ্ছে না মন্তব্য করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “যদি বাংলাদেশি কোনো নাগরিক সেখানে থাকে তাহলে নিয়ম অনুযায়ী প্রোপার চ্যানেলে পাঠানোর কথা বলেছি। ওদেরও যারা ভারত থেকে আসতেছে তাদের কিন্তু আমরা প্রোপার চ্যানেলে পাঠাই।
“কিন্তু ওরা প্রোপার চ্যানেলে না পাঠিয়ে জঙ্গলে, নদীর পাড়ে ফেলে রাখে। এটা কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য না। এটা হিউম্যান রাইটসেরও ভায়োলেশন। এ ব্যাপারে আমরা প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। প্রতিবাদে কিছু কিছু কাজ হচ্ছে, এখন সংখ্যাটা একটু কমে আসছে।”
রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে যেইটা ঘটনা সেই সত্য সংবাদটি প্রকাশ করবেন। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের ডিরেকশন, যেই ঘটনা ঘটে ওইটার সত্যিটা প্রকাশ করে দেওয়া, এইটার ভেতর লুকোচুরি করার কোনো কিছু নাই।
“জনগণ কিন্তু সচেতন। তারপরও কিছু স্বার্থান্বেষী লোকজন তো থাকবেই যারা সবসময় একটা প্রবলেম ক্রিয়েট করার জন্য চেষ্টা করবে।”
‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের কোনো বিভেদ থাকার কথা না’ মন্তব্য করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “যেসব রাজনৈতিক দল পুলিশের সঙ্গে বা অন্যদের সঙ্গে একটা বিভেদ করার চেষ্টা করছে, তাদের অনুরোধ করব, বিভেদ আপনারা নিজেদের ভেতরে করবেন। কিন্তু আমাদের সঙ্গে তো রাজনৈতিক দলের কোনও বিভেদ থাকার কথা না।
“আমাদের কাজ হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। আর আপনাদের (রাজনীতিক) কাজ, জনগণের কাছে গিয়ে ভোট আদায় করা। আপনারা সেই চেষ্টা করবেন। জনগণ যাতে সুখে শান্তিতে থাকতে পারে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন অবনতি না হয়, সেইটা দেখার দায়িত্ব আমাদের।”
গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় করা মামলার অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, “মামলাগুলোর অগ্রগতি…অলরেডি কয়েকটা মামলার কিন্তু বিচার শুরু হয়ে গেছে। আরেকটা বিষয় ছিল যে, একটা হত্যা মামলায় হয়ত ২০ জন আসামি হওয়ার দরকার ছিল, আপনারা ওইখানে ২০০ আসামি দিয়ে দিছেন।
“এতে তদন্তে তো বেশি সময় লাগছে। নিরপরাধ ব্যক্তি যেন কোনও অবস্থাতেই শাস্তির আওতায় না আসে, এজন্য আমাদের কিন্তু বেশিভাবে দেখতে হয়। অনেকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কিছু নিরীহ লোকের নাম দিয়ে দিছে। এজন্য সময় বেশি লাগছে। যদি তারা একচুয়াল আসামির নাম দিত, তাহলে এত সময় লাগত না।”
এ সময় র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।