গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি—এনসিপির সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষের তদন্তে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি না রাখার দাবি জানিয়েছেন দেশের ১০ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
শনিবার এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ওই ঘটনায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। ফলে তদন্তে এসব বাহিনী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিত্ব তদন্তের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
বিবৃতিতে তারা ‘ঢালাও’ মামলা ও গ্রেপ্তারেরও সমালোচনা করেন। এসব ঘটনাকে তারা ‘পুরনো বন্দোবস্তে’ ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত বলেও মন্তব্য করেন।
নাগরিকদের পক্ষ থেকে বিবৃতিটি পাঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। এতে স্বাক্ষর করেন—আলোকচিত্রী শহীদুল আলম, সাংবাদিক তাসনিম খলিল, শিল্পী বীথি ঘোষ, লেখক ফিরোজ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, রুশাদ ফরিদী, আইনজীবী সারা হোসেন, মানজুর আল মতিন ও অধিকারকর্মী নাফিউল আলম সুপ্ত।
বিবৃতিতে বলা হয়, এনসিপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন, শিশুসহ গ্রেপ্তার হন প্রায় ৩০০ জন। একইসঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে পুরো গোপালগঞ্জবাসীর ওপর বিপর্যয়কর অবরোধমূলক পরিস্থিতির হুমকি তৈরি হয়।
“এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে পর্যালোচনার জন্য মঙ্গলবার গোপালগঞ্জ সফর করি,” বিবৃতিতে জানানো হয়।
তারা জানান, সফরে নানা পক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং সংঘর্ষ-সংশ্লিষ্ট স্থান পরিদর্শন করেছেন।
বিবৃতিতে উল্লেখযোগ্য আটটি দাবি ও সুপারিশ হলো:
১. দেশের যেকোনো জেলায় সভা-সমাবেশের অধিকার সব রাজনৈতিক দলের আছে। এনসিপির সমাবেশে হামলার জন্য দায়ীদের বিচারে আনতে হবে এবং নিরীহ কেউ যেন ক্ষতির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে।
২. উসকানিমূলক বক্তব্য, ভিডিও ও পোস্ট সংঘাত বাড়িয়েছে। এনসিপি নেতারা পরিস্থিতির গুরুত্ব না বোঝায় এবং দায়িত্বহীন মন্তব্য না ঠেকানোয় সংকট ঘনীভূত হয়েছে। সব রাজনৈতিক দলের উচিত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য এড়িয়ে চলা।
৩. সন্ত্রাস দমন আইনে ঢালাও মামলা, গ্রেপ্তার, এমনকি শিশুদের গ্রেপ্তার পুরনো দমননীতিতে ফিরে যাওয়ার লক্ষণ। সবাইকে, বিশেষ করে শিশুদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. প্রশাসনের প্রস্তুতি ছিল দুর্বল। গুলিবর্ষণ ছাড়াও হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করা যেত। প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের যৌক্তিকতা নেই। নিরপেক্ষ তদন্ত ও দ্রুত জনসমক্ষে প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানানো হয়।
৫. যেহেতু ঘটনার সঙ্গে সেনাবাহিনী ও পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাই তদন্ত কমিশনে তাদের না রাখার দাবি জানানো হয়। অভিযুক্ত বাহিনী নিজের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারে না।
৬. গোপালগঞ্জে বহিরাগত সন্ত্রাসী ও পলাতক নেতাদের অবস্থানের বিষয়ে গুজব ছড়ালেও প্রতিশোধ নয়, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই হওয়া উচিত আকাঙ্ক্ষিত প্রতিফলন।
৭. মানবাধিকার কমিশনের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আইন সংশোধন করে এ প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার দাবি জানানো হয়।
৮. গোপালগঞ্জের সংঘর্ষে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। যেন কোনো নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার না হন এবং শিশুদের অধিকার নিশ্চিত হয়। সরকারকে প্ররোচনার বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।