মাদ্রাসাছাত্র হত্যাচেষ্টায় অভিনেতা, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ ২০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে অভিনেতা, সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, শিক্ষকসহ ২০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

মামলার আসামিদের মধ্যে ১৪ জন অভিনয়শিল্পী রয়েছেন। তাঁরা হলেন মামুনুর রশীদ, চঞ্চল চৌধুরী, রিয়াজ, ফেরদৌস, আশনা হাবীব ভাবনা, সাজু খাদেম, জায়েদ খান, রোকেয়া প্রাচী, মেহের আফরোজ শাওন, অরুনা বিশ্বাস, জ্যোতিকা জ্যোতি, শামীমা তুষ্টি, শমী কায়সার ও সোহানা সাবা।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত গত বুধবার মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার সিএমএম আদালতের বেঞ্চ সহকারী আলমগীর হোসেন।

গত ২০ মার্চ ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলার আবেদন করেন এম এ হাশেম রাজু। তিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের বাংলাদেশ শাখার প্রেসিডেন্ট এবং ফ্যাসিবাদ উৎখাত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মামলায় সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সাংবাদিক আবেদ খান, সমকালের সাবেক সম্পাদক আলমগীর হোসেন, কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাবেক সম্পাদক নঈম নিজাম, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টিভির সাবেক প্রধান মোজাম্মেল হক, সাংবাদিক মুন্নি সাহা, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাংবাদিক মিথিলা ফারজানা, মাসুদা ভাট্টি ও ফারজানা রুপাকেও আসামি করা হয়েছে।

এ ছাড়া মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আখতারুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য হারুন অর রশীদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল মান্নান, নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম ওয়াহিদুজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও নগরবিদ নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, অধ্যাপক আবু জাফর মো. শফিউল আলম, অধ্যাপক মিহির লাল সাহা এবং অধ্যাপক ও লেখক জাফর ইকবালকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে।

বাদী এম এ হাশেম ও তাঁর আইনজীবী এ বি এম জোবায়ের জানান, গত ২০ মার্চ বাদীর আবেদনের পর আদালত শাহবাগ থানাকে নির্দেশ দেন, আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সাইফুদ্দিনের গুরুতর জখমের ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কি না, তা জানাতে। পরে শাহবাগ থানা আদালতে জানায়, এ বিষয়ে কোনো মামলা হয়নি। এরপর ৩০ এপ্রিল আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে শাহবাগ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর জখম–সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেন আদালত।

মামলায় বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদ। গত বছরের ৪ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের লক্ষ্যে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের এক দফা দাবিতে শহীদ মিনার থেকে মিছিলটি পরীবাগের সামনে এলে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অন্য সন্ত্রাসীরা সেটি অবরোধ করে। তখন ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো হয়, এতে সাইফুদ্দিনের চোখে গুলি লাগে। মামলার বাদী এম এ হাশেম রাজু এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে উল্লেখ করেছেন।

মামলায় আরও বলা হয়েছে, অভিনেতা রোকেয়া প্রাচী, মেহের আফরোজ শাওনসহ অনেকে আওয়ামী সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারবিরোধী আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হত্যা ও নির্যাতনকে গ্লোরিফাই করে বিষোদ্গার ছড়ান।

মামলায় আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ঢাকা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি লাকী আক্তার, গণজাগরণ মঞ্চের সাবেক মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, সাবেক জেলা জজ হেলাল চৌধুরীকেও আসামি করা হয়েছে।

এ ছাড়া মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামালসহ দলের বহু নেতাকেও আসামি করা হয়েছে।

জুলাই মাসের গণ–অভ্যুত্থানের সময়ের আরেক ঘটনায় করা পৃথক হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা, চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তারসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলা ২৮ এপ্রিল রাজধানীর ভাটারা থানায় রেকর্ড করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *