কাশ্মীর হামলায় পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ, আঞ্চলিক সংঘাত না চায় যুক্তরাষ্ট্র

কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। তিনি বলেছেন, হামলার পর পাকিস্তান যেন ভারতের সঙ্গে মিলে তাদের ভূখণ্ডে সক্রিয় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। একই সঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, ভারতের প্রতিক্রিয়া যেন বৃহত্তর কোনো আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ না নেয়।

এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে জে ডি ভ্যান্স বলেন, ‘আমাদের আশা, ভারত হামলার ঘটনায় এমনভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, যাতে পুরো অঞ্চলে বড় ধরনের সংঘাত না ছড়িয়ে পড়ে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, খোলামেলাভাবে বলতে গেলে পাকিস্তান যদি তারা আংশিকভাবে দায়ীও হয়, তবে তারা যেন ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা করে। তাদের মাটিতে যেসব সন্ত্রাসী মাঝেমধ্যে সক্রিয় থাকে, তাদের খুঁজে বের করে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়।’

গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এটিই সবচেয়ে স্পষ্ট বার্তা, যাতে ভারতের চরমপন্থীদের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা নিয়ে ইঙ্গিত করা হলো।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ শীর্ষ মার্কিন নেতারা হামলার নিন্দা জানিয়ে এটিকে ‘সন্ত্রাস’ ও ‘নিন্দনীয়’ আখ্যা দিয়েছেন এবং ভারতের পাশে থাকার কথা বলেছেন। তবে কেউ এখনো সরাসরি পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করেননি।

চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ভারত বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অন্যদিকে, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর পাকিস্তানের কূটনৈতিক গুরুত্ব কিছুটা কমেছে, যদিও দেশটি এখনও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র।

গত কয়েক দিনে যুক্তরাষ্ট্র দু’পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাতে আহ্বান জানিয়েছে। পেহেলগামে হামলার জন্য ভারত ইতিমধ্যেই পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। পাকিস্তান তা অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, তারা ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ রাখছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর রুবিওকে জানিয়েছেন, হামলাকারীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। অপরদিকে পাকিস্তান আশঙ্কা করছে, ভারত যেকোনো সময় সামরিক হামলা চালাতে পারে।

কাশ্মীর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা, যার একাংশ পাকিস্তান ও অন্য অংশ ভারত নিয়ন্ত্রণ করে। তবে উভয় দেশই পুরো ভূখণ্ড নিজেদের বলে দাবি করে আসছে এবং এ নিয়ে অতীতে তারা যুদ্ধেও জড়িয়েছে।

হামলার পর ভারত পানিবণ্টন–সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্থগিত করেছে এবং দুই দেশই একে অন্যের উড়োজাহাজের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *